২০০ এরও বেশি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে (নন-মেলানোমা স্কিন ক্যান্সার বাদে) সবচেয়ে বেশি সনাক্তকৃত ক্যান্সার হলো স্তন ক্যান্সার।
পরবর্তী সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারগুলো হলো — ‘সাধারণ’ বলতে প্রতি বছরে ৪০,০০০ বা তার বেশি মামলা (২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী) — ফুসফুসের ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার।
নিচে ১৩টি সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারের তালিকা দেওয়া হলো, যার সাথে প্রত্যেক ধরনের অনুমানকৃত নতুন কেস এবং মৃত্যু সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন নতুন কেসের ক্রম অনুসারে সাজানো হয়েছে।
১. স্তন ক্যান্সার:
ত্বক ক্যান্সার বাদে, স্তন ক্যান্সার হল আমেরিকান মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সনাক্তকৃত ক্যান্সার।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস:
মহিলা: ২৬৮,৬০০
পুরুষ: ২,৬৭০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু:
মহিলা: ৪১,৭৬০
পুরুষ: ৫০০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার:
মহিলা: ৯০ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
২. ফুসফুসের ক্যান্সার (ব্রঙ্কাসসহ)
দ্বিতীয় সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার হলো ফুসফুসের ক্যান্সার, যা ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ।
ফুসফুস এবং ব্রঙ্কাসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ২২৮,১৫০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ১৪২,৬৭০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ২৩ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
৩. প্রোস্টেট ক্যান্সার
সাধারণত ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায়, প্রোস্টেট ক্যান্সার হল আমেরিকান পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার এবং দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর কারণ।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ১৬৪,৬৯০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ২৯,৪৩০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৯৮ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
৪. কোলন ও রেকটাল ক্যান্সার
কোলোরেকটাল ক্যান্সার বলতে কোলন বা রেকটামে পাওয়া ক্যান্সার বোঝায়। একসাথে তারা বৃহদান্ত্র (large intestine) গঠন করে।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ১,৪৫,৬০০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ৫১,০২০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৬৪ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
৫. মেলানোমা (চর্ম ক্যান্সার)
মেলানোমা এমন একটি ক্যান্সার যা মেলানিন নামক ত্বকের রঙের জন্য দায়ী রঞ্জক উৎপাদনকারী বিশেষ কোষে শুরু হয়।
ত্বকে এটি বেশি দেখা গেলেও, মেলানোমা চোখ এবং অন্যান্য রঞ্জক কোষসমৃদ্ধ টিস্যুতেও হতে পারে।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৯৬,৪৮০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ৭,২৩০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৯২ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
৬. মূত্রথলির ক্যান্সার (Bladder cancer)
মূত্রথলির ক্যান্সার সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় এবং পুরুষদের মধ্যে এটি নারীদের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৮০,৪৭০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ১৭,৬৭০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৭৭ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
৭. নন-হজকিনস লিম্ফোমা
নন-হজকিনস লিম্ফোমা হল এক ধরনের ক্যান্সার যা লিম্ফাটিক সিস্টেমে শুরু হয়। এটি এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা “লিম্ফোসাইট” থেকে গঠিত টিউমারের মাধ্যমে দেখা যায়।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৭৪,২০০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ১৯,৯৭০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৭১ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
৮. কিডনি (রেনাল সেল এবং রেনাল পেলভিস) ক্যান্সার
কিডনি ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ধরণ হলো রেনাল সেল কার্সিনোমা, যা সাধারণত একটি কিডনিতে একটি টিউমার হিসেবে গঠিত হয়।রেনাল পেলভিস ক্যান্সার কিডনির পেলভিস বা ইউরেটারে (যে নালী কিডনি থেকে মূত্রথলিতে মূত্র বহন করে) তৈরি হয়।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৭৩,৮২০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ১৪,৭৭০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৭৫ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
৯. এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার
গর্ভাশয়ের দুটি ধরনের ক্যান্সার রয়েছে। এর মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার সাধারণ, আর ইউটারাইন সারকোমা বিরল।অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৬১,৮৮০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ১২,১৬০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৮৪ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
১০. লিউকেমিয়া (সব ধরণের)
লিউকেমিয়া হলো এমন একধরনের ক্যান্সার যা অস্থিমজ্জার রক্ত তৈরির টিস্যুতে শুরু হয়।এই ক্যান্সারে অস্বাভাবিক পরিমাণে শ্বেত রক্তকণিকা রক্ত ও অস্থিমজ্জায় জমা হয়ে যায়, যার ফলে স্বাভাবিক রক্তকণিকাগুলো স্থানচ্যুত হয়। এর ফলে শরীরে অক্সিজেন পরিবহন, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৬১,৭৮০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ২২,৮৪০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৬১.৪ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
১১. প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার
প্যানক্রিয়াটিক বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার অগ্ন্যাশয়ে শুরু হয়ে দ্রুত আশেপাশের অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৫৬,৭৭০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ৪৫,৭৫০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ৯ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
১২. থাইরয়েড ক্যান্সার
অ্যানাপ্লাস্টিক থাইরয়েড ক্যান্সার নিরাময় কঠিন হলেও ফলিকুলার, মেডুলারি এবং প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যান্সার (সবচেয়ে সাধারণ ধরন) সাধারণত সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়।অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৫২,০৭০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ২,১৭০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: প্রায় ১০০ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
১৩. লিভার ও ইনট্রাহেপাটিক বাইল ডাক্ট ক্যান্সার
লিভার ক্যান্সারের মধ্যে রয়েছে হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (সবচেয়ে সাধারণ), বাইল ডাক্ট ক্যান্সার (কোলাঞ্জিওকার্সিনোমা) এবং হেপাটোব্লাস্টোমা।হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে লিভারের সিরোসিস এবং দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি বা সি সংক্রমণ।
অনুমানকৃত বার্ষিক নতুন কেস: ৪২,০৩০
অনুমানকৃত বার্ষিক মৃত্যু: ৩১,৭৮০
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার: ১৮ শতাংশ (২০০৮–২০১৪)
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার কী?
৫-বছরের বেঁচে থাকার হার দেখায় নির্দিষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মানুষেরা ক্যান্সারে আক্রান্ত না হওয়া সাধারণ মানুষের তুলনায় কত শতাংশ ৫ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকেন।
তবে মনে রাখা জরুরি, প্রতিটি মানুষ আলাদা, এবং চিকিৎসার প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হতে পারে। এই পরিসংখ্যানগুলো বড় জনগোষ্ঠীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, তাই এটি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না।
সারাংশ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এমন ১৩টি ক্যান্সার প্রায় ৭১.৫ শতাংশ বার্ষিক নতুন কেসের (২০১৮) প্রতিনিধিত্ব করে।
যদি আপনার বা আপনার প্রিয়জনের কোনো উপসর্গ থাকে যা ক্যান্সার নির্দেশ করতে পারে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
