ক্যান্সার: ধরন, কারণ, প্রতিরোধ ও আরও অনেক কিছু

ক্যান্সার

ক্যান্সার তখন ঘটে যখন অস্বাভাবিক কোষের জেনেটিক পরিবর্তন (মিউটেশন) তাদের দ্রুত বিভাজিত হতে বাধ্য করে। এই মিউটেশনগুলো আপনি উত্তরাধিকারসূত্রে পেতে পারেন, অথবা পরিবেশগত কারণে তৈরি হতে পারে।

ক্যান্সার হলো বিভিন্ন ধরনের রোগের একটি বড় গোষ্ঠী, যা তখন ঘটে যখন অস্বাভাবিক কোষ দ্রুত বিভাজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য টিস্যু ও অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এই দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোষগুলো টিউমার তৈরি করতে পারে। এছাড়াও, এগুলো শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে।

ক্যান্সার হলো বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, ২০২০ সালে মৃত্যুর প্রায় প্রতি ৬টির মধ্যে ১টি ক্যান্সারের কারণে হয়েছে। প্রতিদিনই বিশেষজ্ঞরা নতুন ক্যান্সার চিকিৎসা পরীক্ষা ও উদ্ভাবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

ক্যান্সারের কারণ কী?

ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলো মিউটেশন, অর্থাৎ কোষের DNA-তে পরিবর্তন। এই জেনেটিক মিউটেশন বা পরিবর্তন জন্মসূত্রেও হতে পারে। আবার জন্মের পরেও পরিবেশগত নানা প্রভাবের কারণে এটি হতে পারে।

এই বাহ্যিক কারণগুলোকে বলা হয় কার্সিনোজেন (carcinogens), যেগুলোর মধ্যে থাকতে পারে:

  • ভৌত কার্সিনোজেন: যেমন তেজস্ক্রিয়তা এবং অতিবেগুনি (UV) রশ্মি

  • রাসায়নিক কার্সিনোজেন: যেমন সিগারেটের ধোঁয়া, অ্যাসবেস্টস, অ্যালকোহল, বায়ু দূষণ, দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে

  • জীববৈজ্ঞানিক (বায়োলজিক্যাল) কার্সিনোজেন: যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৩ শতাংশ ক্যান্সারে মৃত্যুর পেছনে কারণ হতে পারে:

  • তামাক বা ধূমপান

  • অ্যালকোহল সেবন

  • অতিরিক্ত শরীরের ওজন (উচ্চ BMI)

  • ফল ও সবজি কম খাওয়া

  • শারীরিক কার্যকলাপের অভাব

ঝুঁকির কারণসমূহ (Risk Factors): 

কিছু ঝুঁকির কারণ আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ঝুঁকির কারণগুলো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:

  • তামাক বা ধূমপান

  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস — ২০১৭ সালের একটি পর্যালোচনা অনুযায়ী, এতে রয়েছে লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস, চিনি মেশানো পানীয়, অতিরিক্ত লবণযুক্ত স্ন্যাকস, অতিরিক্ত শর্করা ও প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট

  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

  • বায়ু দূষণের সংস্পর্শ

  • তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শ

  • অতিরক্ষাহীনভাবে অতিবেগুনি (UV) রশ্মির সংস্পর্শ — যেমন সরাসরি রোদে থাকা

  • নির্দিষ্ট ভাইরাসের সংক্রমণ — যেমন H. pylori, HPV (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস), হেপাটাইটিস B ও C, HIV, এবং Epstein-Barr virus, যা ইনফেকশিয়াস মনোনিউক্লিওসিস সৃষ্টি করে


বয়সের সাথে সাথে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (NCI)-এর মতে, সাধারণভাবে ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, এরপর তা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।


২০২০ সালের একটি গবেষণার পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এই বৃদ্ধির কারণ হতে পারে:

  • বয়সের সাথে কোষের মেরামত ব্যবস্থার কার্যকারিতা কমে যাওয়া

  • জীবনের বিভিন্ন সময়ে ঝুঁকির উপাদান জমে থাকা

  • দীর্ঘ সময় ধরে কার্সিনোজেন বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংস্পর্শে থাকা


কিছু বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যা, যেগুলো দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে, সেগুলোও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ: আলসারেটিভ কোলাইটিস, একটি দীর্ঘস্থায়ী অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ।

ক্যান্সারের ধরনসমূহ:

ক্যান্সারকে সাধারণত যেখানে এটি শুরু হয় এবং যেসব কোষ থেকে এটি গঠিত হয়, সেই স্থান ও কোষের নাম অনুযায়ী নামকরণ করা হয় — এমনকি যদি এটি শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়েও পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি ক্যান্সার ফুসফুসে শুরু হয়ে লিভারে ছড়িয়ে পড়ে, তবুও একে ফুসফুস ক্যান্সার (lung cancer) বলা হয়।

কিছু সাধারণ ধরনের ক্যান্সারের জন্য নির্দিষ্ট ক্লিনিক্যাল (চিকিৎসা সম্পর্কিত) শব্দ ব্যবহার করা হয়:

  • কার্সিনোমা (Carcinoma): এটি ত্বকে বা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের আবরণী টিস্যুতে শুরু হয়।

  • সার্কোমা (Sarcoma): এটি হাড়, পেশি, তরুণাস্থি (cartilage), এবং রক্তনালীর মতো সংযোগকারী টিস্যুর ক্যান্সার।

  • লিউকেমিয়া (Leukemia): এটি অস্থিমজ্জার (bone marrow) ক্যান্সার, যেখানে রক্তকণিকা তৈরি হয়।

  • লিম্ফোমা ও মায়েলোমা (Lymphoma and Myeloma): এটি ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্যান্সার।


নিম্নে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের তালিকা দেওয়া হলো:

  • অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার

  • মূত্রাশয়ের ক্যান্সার (Bladder Cancer)

  • হাড়ের ক্যান্সার (Bone Cancer)

  • মস্তিষ্কের ক্যান্সার (Brain Cancer)

  • স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer)

  • জরায়ুমুখের ক্যান্সার (Cervical Cancer)

  • কোলন বা কোলোরেকটাল ক্যান্সার (Colon or Colorectal Cancer)

  • ডুওডেনাল ক্যান্সার (Duodenal Cancer)

  • কানের ক্যান্সার (Ear Cancer)

  • এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার (Endometrial Cancer)

  • ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার (Esophageal Cancer)

  • হৃদপিণ্ডের ক্যান্সার (Heart Cancer)

  • গলব্লাডার ক্যান্সার (Gallbladder Cancer)

  • কিডনি বা রেনাল ক্যান্সার (Kidney or Renal Cancer)

  • ল্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার (Laryngeal Cancer)

  • লিউকেমিয়া (Leukemia)

  • ঠোঁটের ক্যান্সার (Lip Cancer)

  • লিভারের ক্যান্সার (Liver Cancer)

  • ফুসফুসের ক্যান্সার (Lung Cancer)

  • লিম্ফোমা (Lymphoma)

  • মেসোথেলিওমা (Mesothelioma)

  • মায়েলোমা (Myeloma)

  • মুখের ক্যান্সার (Oral Cancers)

  • ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার (Ovarian Cancer)

  • অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার (Pancreatic Cancer)

  • পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার (Penile Cancer)

  • প্রোস্টেট ক্যান্সার (Prostate Cancer)

  • রেকটাল ক্যান্সার (Rectal Cancer)

  • ত্বকের ক্যান্সার (Skin Cancer)

  • ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্যান্সার (Small Intestine Cancer)

  • প্লীহা বা স্প্লিন ক্যান্সার (Spleen Cancer)

  • পেট বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার (Stomach or Gastric Cancer)

  • অণ্ডকোষের ক্যান্সার (Testicular Cancer)

  • থাইরয়েড ক্যান্সার (Thyroid Cancer)

  • জরায়ুর ক্যান্সার (Uterine Cancer)

  • যোনির ক্যান্সার (Vaginal Cancer)

  • ভাজাইনা বাইরের অংশের (ভালভার) ক্যান্সার (Vulvar Cancer)

  • প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করার গুরুত্ব: 

  • প্রাথমিক শনাক্তকরণ বলতে বোঝানো হয় যখন ক্যান্সার একেবারে শুরু পর্যায়ে ধরা পড়ে। এতে চিকিৎসা আরও কার্যকর হয় এবং মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

    ক্যান্সার স্ক্রিনিং পরীক্ষা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
    নিম্নলিখিত কয়েকটি সাধারণ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সারের লক্ষণ আগেভাগেই ধরা যেতে পারে:

    • জরায়ুমুখ ও প্রোস্টেট ক্যান্সার:
      এই স্ক্রিনিংগুলো সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবেও করা হয়।

    • ফুসফুসের ক্যান্সার:
      যাদের নির্দিষ্ট ঝুঁকি রয়েছে (যেমন দীর্ঘমেয়াদি ধূমপান), তাদের নিয়মিত ফুসফুস ক্যান্সার স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

    • ত্বকের ক্যান্সার:
      ত্বকে কোনো সমস্যা থাকলে বা আপনি ঝুঁকিতে থাকলে, ডার্মাটোলজিস্ট দ্বারা ত্বক পরীক্ষা করে ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়।

    • কোলোরেকটাল ক্যান্সার (Colon ও Rectum):
      আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি (ACS)-এর মতে, ৪৫ বছর বয়স থেকে নিয়মিত কোলোরেকটাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত।
      এটি সাধারণত কোলোনোস্কপি-র মাধ্যমে করা হয়।
      এছাড়াও, কিছু হোম টেস্ট কিট দিয়েও প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব — ২০১৭ সালের এক গবেষণায় এমনটাই বলা হয়েছে।

    • স্তন ক্যান্সার:
      মহিলাদের জন্য ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সে ম্যামোগ্রাম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
      কেউ চাইলে ৪০ বছর থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করতে পারেন।
      যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের জন্য আরও আগেই স্ক্রিনিং শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।


    যদি আপনার পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে বা আপনি উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্ক্রিনিং করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


    লক্ষণ দেখে ক্যান্সার শনাক্ত করা

    যদিও অনেক সময় ক্যান্সারের লক্ষণ দেখে চিকিৎসা শুরু করা যায়, কিছু ক্যান্সার এমনও আছে যেগুলো খুব দেরিতে লক্ষণ প্রকাশ করে, অর্থাৎ দেরিতে ধরা পড়ে।

    ক্যান্সারের সাধারণ কিছু লক্ষণ হতে পারে:

    • শরীরের যেকোনো স্থানে অস্বাভাবিক ফোলাভাব বা গাঁট (lump)

    • কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া

    • জ্বর

    • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা

    • ব্যথা

    • রাতে ঘাম হওয়া (night sweats)

    • হজমের সমস্যা বা বদল

    • ত্বকের পরিবর্তন

    • দীর্ঘস্থায়ী কাশি

    বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের নিজস্ব কিছু নির্দিষ্ট সতর্ক লক্ষণ থাকতে পারে।
    যদি আপনার অজানা বা অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা যায়, দেরি না করে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন

  • ক্যান্সার কীভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ছড়িয়ে পড়ে?

  • অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন

    আপনার শরীরের স্বাভাবিক কোষগুলো বেড়ে ওঠে এবং বিভক্ত হয়। প্রতিটি কোষের একটি জীবনচক্র থাকে যা কোষের ধরণের ওপর নির্ভর করে। কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা মারা গেলে, নতুন কোষ তাদের জায়গা নেয়।

    ক্যান্সার এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং কোষগুলোকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে বাধ্য করে। এটি কোষের DNA-তে পরিবর্তন বা মিউটেশন থেকে হয়।

    প্রতিটি কোষের DNA-তে নির্দেশনা থাকে যা কোষকে বলে কী করতে হবে এবং কীভাবে বেড়ে উঠতে এবং বিভক্ত হতে হবে। DNA-তে মিউটেশন অনেক সময় ঘটে, কিন্তু সাধারণত কোষগুলো এই ভুলগুলি সংশোধন করে। যখন এই ভুল ঠিক করা হয় না, তখন একটি কোষ ক্যান্সার জনিত হয়ে যেতে পারে।

    মিউটেশন এমন কোষ তৈরি করতে পারে যা মারা যাওয়ার পরিবর্তে বেঁচে থাকে, এবং এমন কোষ তৈরি করে যা প্রয়োজন হয় না। অতিরিক্ত এই কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভক্ত হয়ে টিউমার তৈরি করতে পারে।


    টিউমার তৈরি হওয়া

    টিউমার শরীরের কোথায় গড়ে ওঠে তার ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

    সব টিউমার ক্যান্সারজনিত নয়। বেনাইন (Benign) টিউমার অ-ক্যান্সারজনিত হয় এবং পাশের টিস্যুতে ছড়ায় না।

    কিন্তু কখনও কখনও টিউমার বড় হয়ে পাশের অঙ্গ ও টিস্যুর ওপর চাপ দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট (Malignant) টিউমার হলো ক্যান্সারজনিত এবং এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়াতে পারে।


    মেটাস্টাসিস (Metastasis)

    কিছু ক্যান্সার কোষ রক্ত অথবা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে শরীরের দূরবর্তী অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই প্রক্রিয়াকে মেটাস্টাসিস বলা হয়।

    মেটাস্টাসিস হওয়া ক্যান্সারকে আগের থেকে বেশি উন্নত বা জটিল ধরা হয়। এই ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসায় কঠিন এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।


    চিকিৎসা

    ক্যান্সারের চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা ক্যান্সারের ধরণ ও অগ্রগতির স্তরের ওপর নির্ভর করে।

    • লোকালাইজড চিকিৎসা (Localized treatment):
      সাধারণত শরীরের নির্দিষ্ট অংশ বা টিউমারে সার্জারি বা স্থানীয় রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা হয়।

    • সিস্টেমিক চিকিৎসা (Systemic treatment):
      কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপির মতো ওষুধ সম্পূর্ণ শরীরে প্রভাব ফেলে।

    • প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা (Palliative treatment):
      ক্যান্সারের কারণে হওয়া শারীরিক অসুবিধা যেমন শ্বাসকষ্ট, ব্যথা ইত্যাদি উপশমে সাহায্য করে।

    বিভিন্ন চিকিৎসা একসঙ্গে ব্যবহার করে যতটা সম্ভব ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়।


    সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি

    • সার্জারি:
      ক্যান্সার যতটা সম্ভব অপসারণ করা হয়। অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে মিলিয়ে সার্জারি করা হয় যাতে সব ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয়।

    • কেমোথেরাপি:
      এটি দ্রুত বিভাজিত হওয়া ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য টক্সিক ওষুধ ব্যবহার করে। টিউমার ছোট করতে বা শরীরের কোষ সংখ্যা কমাতে ব্যবহৃত হয়।

    • রেডিয়েশন থেরাপি:
      শক্তিশালী রশ্মি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়। শরীরের ভিতরে দিলে ব্র্যাকিথেরাপি, বাইরে দিলে এক্সটার্নাল বিম রেডিয়েশন বলা হয়।

    • স্টেম সেল (অস্থিমজ্জা) ট্রান্সপ্লান্ট:
      ক্ষতিগ্রস্ত অস্থিমজ্জার পরিবর্তে সুস্থ স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতিতে উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি ব্যবহার করা যায়। সাধারণত লিউকেমিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

    • ইমিউনোথেরাপি (বায়োলজিক্যাল থেরাপি):
      শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেমকে ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ আক্রমণ করা হয়।

    • হরমোন থেরাপি:
      কিছু ক্যান্সার হরমোনের সাহায্যে বৃদ্ধি পায়, তাই হরমোন বন্ধ বা কমিয়ে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করা হয়।

    • টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি:
      ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট অণুগুলোর কার্যকারিতা ব্যাহত করার জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়। জেনেটিক টেস্টের মাধ্যমে এই থেরাপির যোগ্যতা নির্ণয় করা হয়।


    ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল

    নতুন ক্যান্সার চিকিৎসার পরীক্ষা চালানো হয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে। এতে অনুমোদিত ওষুধের নতুন ব্যবহার বা নতুন ওষুধ পরীক্ষা করা হয়। যারা প্রচলিত চিকিৎসায় ভালো সাফল্য পাননি, তারা এই ট্রায়ালে অংশ নিতে পারেন। অনেক সময় এই চিকিৎসা ফ্রি হতে পারে।

    আপনি যদি আগ্রহী হন, আপনার কাছাকাছি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল খুঁজে নিতে পারেন।


    বিকল্প চিকিৎসা

    বিকল্প চিকিৎসা প্রধান চিকিৎসার সঙ্গে সম্পূরক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ক্যান্সারের উপসর্গ এবং চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন বমি, ক্লান্তি, ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বিকল্প চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

    • আকুপাংচার

    • যোগব্যায়াম

    • মাসাজ

    • ধ্যান

    • শিথিলকরণ পদ্ধতি


    ভব্যতা (Outlook)

    ক্যান্সার নির্ণয়ের পর রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন:

    • ক্যান্সারের ধরন

    • নির্ণয়ের সময় ক্যান্সারের স্তর

    • ক্যান্সারের অবস্থান

    • রোগীর বয়স

    • সাধারণ স্বাস্থ্য অবস্থা

    • প্রতিরোধ

      ক্যান্সারের কারণগুলো জানলে আপনি এমন একটি জীবনধারা অনুসরণ করতে পারবেন যা আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

      ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য নেওয়া যায় এমন প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলি হল:

      • তামাক এবং ধূমপানের ধোঁয়া এড়ানো

      • প্রক্রিয়াজাত মাংসের পরিমাণ সীমিত রাখা

      • প্রধানত উদ্ভিজ্জ খাবার, লীন প্রোটিন, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ, যেমন মেদিটেরেনিয়ান ডায়েট

      • অ্যালকোহল এড়ানো অথবা মাত্রাতিরিক্ত না খাওয়া

      • স্বাভাবিক ওজন এবং BMI বজায় রাখা

      • প্রতি সপ্তাহে ১৫০ থেকে ৩০০ মিনিট মাঝারি পরিমাণে শারীরিক কার্যকলাপ করা

      • সরাসরি সূর্যের আলো থেকে বাঁচা এবং ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন, টুপি, এবং সানগ্লাস ব্যবহার করা

      • ট্যানিং বেড ব্যবহার না করা

      • ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাস যেমন হেপাটাইটিস বি এবং HPV থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিন নেওয়া

      নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যান যাতে তারা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের জন্য আপনাকে স্ক্রিন করতে পারেন। এতে সম্ভাব্য ক্যান্সার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধরা পড়ার সুযোগ বেড়ে যায়।


      সারাংশ

      ক্যান্সার হল কোষের জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে হওয়া একটি গুরুতর রোগের দল। অস্বাভাবিক ক্যান্সার কোষ দ্রুত বিভাজিত হয়ে টিউমার তৈরি করতে পারে।

      ধূমপান, মদ্যপান, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ BMI এবং কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

      স্ক্রিনিংগুলো ক্যান্সারকে প্রথম দিকে ধরতে সাহায্য করতে পারে, যখন চিকিৎসা আরও সহজ হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, ধাপ, বয়স এবং সাধারণ স্বাস্থ্যের ওপর।

আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি ভালো: হাঁটা না দৌড়ানো?
আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি ভালো: হাঁটা না দৌড়ানো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *