কিছু ব্যায়াম যেমন দৌড়ানো, সাইক্লিং করা, এবং HIIT ওয়ার্কআউট ঘণ্টায় বেশি ক্যালোরি ঝরায়। আর যদি আপনি দৌড়াতে ভালো না বাসেন, তাহলে আপনার আরও অনেক বিকল্প আছে।
যদি আপনি সবচেয়ে বেশি ক্যালোরি পেতে চান, তাহলে দৌড়ানোই সবচেয়ে ভালো। কারণ দৌড়ানোর সময় ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ক্যালোরি ঝরে।
তবে দৌড়ানো যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে HIIT ওয়ার্কআউট, দড়ি লাফানো, বা সাঁতার কাটার মতো অন্য অনেক ব্যায়ামও করতে পারেন। আপনি নিজের পছন্দ এবং ফিটনেস লেভেলের ওপর নির্ভর করে এসব ব্যায়ামের যেকোনো মিশ্রণ করতে পারেন।
আপনি কত ক্যালোরি ঝরান, তা নির্ভর করে কয়েকটি জিনিসের ওপর:
-
ব্যায়ামের সময়কাল
-
ব্যায়ামের গতি
-
ব্যায়ামের তীব্রতা
-
আপনার ওজন ও উচ্চতা
সাধারণত, আপনার ওজন যত বেশি হবে, তত বেশি ক্যালোরি ঝরানো সম্ভব।
যদি আপনি নির্দিষ্ট ক্যালোরি বার্ন কত হচ্ছে তা জানতে চান, তাহলে একজন পার্সোনাল ট্রেইনারের সাহায্য নিতে পারেন। তিনি আপনার ব্যায়ামের সময় ক্যালোরি বার্ন কত হচ্ছে, সেটি নির্ণয় করতে পারবেন।
অন্যদিকে, আপনি অনলাইনে ক্যালোরি বার্ন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করেও জানতে পারেন। কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের নাম হলো:
-
acefitness.org
-
calculator.net
-
omnicalculator.com
-
calories.info
ক্যালোরি ঝরানোর জন্য ১২টি সেরা ব্যায়াম
নিচের টেবিলে দেওয়া হয়েছে ১২টি ব্যায়াম যা ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ক্যালোরি পোড়ায়।
মনে রাখবেন, এখানে দেওয়া ক্যালোরির হিসাব আনুমানিক। আপনার প্রকৃত ক্যালোরি বার্ন নির্ভর করে ব্যায়ামের তীব্রতা, সময়কাল, ও আপনার ওজনের ওপর।
ব্যায়াম | ওজন ১২৫ পাউন্ড | ওজন ১৫৫ পাউন্ড | ওজন ১৮৫ পাউন্ড |
---|---|---|---|
দৌড়ানো | ৬৫২ ক্যালোরি | ৮০৮ ক্যালোরি | ৯৬৫ ক্যালোরি |
ওয়াটার পোলো | ৫৬৬ ক্যালোরি | ৭০৩ ক্যালোরি | ৮৩৯ ক্যালোরি |
সাইক্লিং | ৪৮০ ক্যালোরি | ৫৯৬ ক্যালোরি | ৭১০ ক্যালোরি |
ক্যালিসথেনিক্স | ৪৮০ ক্যালোরি | ৫৯৬ ক্যালোরি | ৭১০ ক্যালোরি |
সার্কিট ট্রেনিং | ৪৮০ ক্যালোরি | ৫৯৬ ক্যালোরি | ৭১০ ক্যালোরি |
দড়ি লাফানো | ৪৫৩ ক্যালোরি | ৫৬২ ক্যালোরি | ৬৭১ ক্যালোরি |
স্টেশনারি সাইক্লিং | ৪২০ ক্যালোরি | ৫২০ ক্যালোরি | ৬২২ ক্যালোরি |
রোয়িং মেশিন | ৪২০ ক্যালোরি | ৫২০ ক্যালোরি | ৬২২ ক্যালোরি |
এরোবিক নৃত্য | ৩৯৬ ক্যালোরি | ৪৯২ ক্যালোরি | ৫৮৭ ক্যালোরি |
সাঁতার (স্বস্তিতে) | ৩৯৬ ক্যালোরি | ৪৯২ ক্যালোরি | ৫৮৭ ক্যালোরি |
জগিং | ৩৯৬ ক্যালোরি | ৪৯২ ক্যালোরি | ৫৮৭ ক্যালোরি |
হাইকিং | ৩৪০ ক্যালোরি | ৪২১ ক্যালোরি | ৫০৩ ক্যালোরি |
সময় কম থাকলেও ক্যালোরি ঝরানোর উপায়
আপনার কাছে সময় কম থাকলেও আপনি এমন ব্যায়াম করতে পারেন যা অনেক ক্যালোরি পোড়ায়। মূল কথা হলো উচ্চ-তীব্রতার ওয়ার্কআউট (High Intensity Workouts) করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া, যা দ্রুত আপনার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়।
হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT) হলো এই ধরণের ওয়ার্কআউটের একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এতে শরীরের অ্যারোবিক ক্ষমতার ৭০% এর বেশি দিয়ে শর্ট বুর্স্টে ব্যায়াম করা হয়।
একটি HIIT পদ্ধতিতে ৩০ সেকেন্ড দ্রুত ব্যায়াম ও ১ মিনিট বিশ্রামের মধ্যে পালা পালা পরিবর্তন করা হয়। ৩০ মিনিট বা তার কম সময়ে এই উচ্চ তীব্রতার ওয়ার্কআউট অনেক ক্যালোরি পোড়াতে সক্ষম।
সময় কম থাকলে এই ব্যায়ামগুলো চেষ্টা করুন বা সার্কিট ট্রেনিং রুটিনের অংশ হিসেবে করুন:
হাই-নী রানিং (High-knee running)
-
১ মিনিটে পোড়ানো ক্যালোরি: ৩.৫ থেকে ৭
-
এটি একটি শক্তিশালী কার্ডিও ব্যায়াম যা হার্ট রেট বাড়ায় ও নিচের দেহকে শক্তিশালী করে।
-
করার পদ্ধতি: জায়গায় দৌড়ান, হাঁটু যতটা সম্ভব উঁচু তোলুন, হাত দ্রুত上下 নাড়ান।
বাট কিকস (Butt kicks)
-
১ মিনিটে পোড়ানো ক্যালোরি: ৮ থেকে ১২
-
হাই-নী রানিংয়ের মতোই এটি একটি কার্ডিও ব্যায়াম। ৩০ মিনিটে উচ্চ তীব্রতায় করলে দ্রুত ক্যালোরি পোড়ানো যায়।
-
করার পদ্ধতি: এক পায়ের এড়ু পেছনের দিকে তুলুন, তারপর অন্য পায়ের, হাতও দ্রুত নাড়ান।
মাউন্টেন ক্লাইম্বার (Mountain climbers)
-
১ মিনিটে পোড়ানো ক্যালোরি: ৭ থেকে ১২
-
এটি সম্পূর্ণ দেহের কার্ডিও ওয়ার্কআউট, শরীরের অনেক অংশ ব্যবহার হয়।
-
করার পদ্ধতি: প্ল্যাঙ্ক পোজিশনে থাকুন, ডান হাঁটু বুকে তুলুন, প্ল্যাঙ্কে ফিরুন, বাম হাঁটু তুলুন, দ্রুত রিপিট করুন।
সাঁতার (Swimming)
-
৩০ মিনিটে পোড়ানো ক্যালোরি: ১৯৮ থেকে ২৯৪
-
এটি কম চাপের ব্যায়াম, মাংসপেশি শক্তিশালী করে, রক্ত সঞ্চালন ও ফুসফুস-হৃদয়ের সক্ষমতা বাড়ায়।
-
সাঁতার এবং ওয়াটার অ্যারোবিক্স করে ক্যালোরি বার্ন বাড়ান।
স্টেশনারি সাইক্লিং (Stationary bicycling)
-
৩০ মিনিটে পোড়ানো ক্যালোরি: ২১০ থেকে ৩১১
-
স্টেশনারি বাইক থাকলে উচ্চ তীব্রতায় সাইক্লিং করুন।
-
৫ মিনিট ওয়ার্মআপের পর ১ মিনিট দ্রুত সাইক্লিং ও ২ মিনিট ধীর গতির পুনরাবৃত্তি করুন। গতি স্কেলে দ্রুত সময় ৭ থেকে ৯ এবং ধীর সময় ৫ থেকে ৬।
স্প্রিন্ট (Sprints)
-
১ মিনিটে পোড়ানো ক্যালোরি: ১৫ থেকে ২২
-
সাধারণ দৌড়ের চেয়ে বেশি ক্যালোরি পোড়ায়। সময় কম থাকলে দ্রুত স্প্রিন্ট করুন।
-
১০০ মিটার স্প্রিন্টের ৩ সেট করুন, ৩০ মিনিটের জন্য এই ইন্টারভাল ট্রেনিং করতে পারেন।
-
স্প্রিন্টের আগে জাম্পিং জ্যাকস বা হাই-নী রানিং দিয়ে ওয়ার্মআপ করুন।
বাড়িতে করার জন্য ক্যালোরি বার্নিং ব্যায়াম
যদি জিমে যেতে না পারেন, তবুও এই ব্যায়ামগুলো বাড়িতে করতে পারেন:
-
হাই-নী রানিং, বাট কিকস, মাউন্টেন ক্লাইম্বার (কম জায়গায় হয়)
-
হাঁটা (মিনিটে ৩.১ থেকে ৪.৬ ক্যালোরি পোড়ায়)
-
দৌড়ানো (মিনিটে ১০.৮ থেকে ১৬ ক্যালোরি পোড়ায়)
-
এরোবিক নাচ (মিনিটে ৬.৬ থেকে ৯.৮ ক্যালোরি পোড়ায়)
-
জাম্পিং জ্যাকস (মিনিটে ৮ থেকে ১১.৮ ক্যালোরি পোড়ায়)
-
দড়ি লাফানো (মিনিটে ৭.৬ থেকে ৯.৮ ক্যালোরি পোড়ায়)
অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করার জন্য:
কার্ডিও বনাম ওয়েট ট্রেনিং
-
কার্ডিও এক সেশনে বেশি ক্যালোরি পোড়ায়, কিন্তু ওয়েট ট্রেনিং পেশি বাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিশ্রামে বেশি ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।
-
সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে কার্ডিও ও ওয়েট ট্রেনিং উভয়ই করবেন।
ওয়ার্মআপ ও কুলডাউন
-
ব্যায়ামের আগে ওয়ার্মআপ করলে শরীর প্রস্তুত হয় ও আঘাতের ঝুঁকি কমে।
-
কুলডাউন হার্ট রেট ধীরে ধীরে কমায় এবং অসুস্থ বোধ বা মাথা ঘোরার ঝুঁকি কমায়।
-
যদি আপনার কোনো আঘাত, সীমিত চলাচল বা শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে ব্যায়াম সামঞ্জস্য করুন।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
-
ডাক্তার, পার্সোনাল ট্রেনার বা ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নিলে সঠিক ও নিরাপদ ব্যায়াম করা সম্ভব।
শুরু করার জন্য:
-
নতুন ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করুন।
-
সহজ ও মৌলিক ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন, কম রিপিটেশন ও হালকা ওজন ব্যবহার করুন যাতে আঘাতের সম্ভাবনা কমে।
-
ওজন কমানোর জন্য পার্সোনাল ট্রেনারের সাহায্য নিন, যিনি আপনার লক্ষ্য ও স্বাস্থ্য অনুসারে পরিকল্পনা করবেন।
সংক্ষেপে:
দৌড় সবচেয়ে বেশি ক্যালোরি পোড়ায়। স্টেশনারি সাইক্লিং, জগিং ও সাঁতারে বিকল্প রয়েছে। HIIT ব্যায়াম দ্রুত ক্যালোরি পোড়ায় এবং ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। নতুন রুটিন শুরু করার আগে ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Comments
It’s remarkable to visit this site and reading the views of all colleagues concerning
this piece of writing, while I am also eager of getting knowledge.