পেলভিক ফ্লোর থেরাপি


পেলভিক ফ্লোর থেরাপির বিস্তারিত

পেলভিক ফ্লোর হল পেটের নিচের অংশে অবস্থিত পেশীর একটি জটিল নেটওয়ার্ক, যা মলদ্বার, মূত্রথল এবং প্রজনন অঙ্গকে সমর্থন করে। এই পেশীগুলো ঠিকমতো কাজ না করলে মলত্যাগের নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়, যা IBS রোগীদের জন্য এক বড় সমস্যা।

IBS-এর রোগীরা পেলভিক ফ্লোর পেশীর শিথিলতা বা দুর্বলতার কারণে ডিফিকেশন করতে গিয়ে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন। এই সমস্যার সমাধানেই পেলভিক ফ্লোর থেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


পেলভিক ফ্লোর থেরাপির উদ্দেশ্য

  • পেশীর শক্তি বাড়ানো: পেলভিক ফ্লোরের দুর্বল পেশীকে শক্তিশালী করে দেহের বিভিন্ন অংশের সমর্থন নিশ্চিত করা।

  • শিথিলতা শেখানো: পেশীগুলো শিথিল করার সঠিক কৌশল শেখানো যাতে কষ্টের সময় শিথিলতা বজায় থাকে এবং মলত্যাগ সহজ হয়।

  • মসৃণ সমন্বয়: পেশীগুলোর কাজ করার মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে পেশীগুলো যেন একসাথে সঠিকভাবে কাজ করে।


পেলভিক ফ্লোর থেরাপির ধাপসমূহ

১. মূল্যায়ন (Assessment): থেরাপিস্ট আপনার পেলভিক ফ্লোর পেশীর শক্তি, শিথিলতা এবং কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন।

২. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: আপনি কীভাবে পেলভিক ফ্লোরের পেশীগুলো সঠিকভাবে শিথিল বা শক্তিশালী করবেন, তা শেখানো হয়।

৩. বায়োফিডব্যাক: বিশেষ সেন্সরের মাধ্যমে পেশীর কার্যকলাপ মনিটর করে আপনি নিজে বুঝতে পারেন কিভাবে পেশী নিয়ন্ত্রণ করবেন।

৪. ম্যানুয়াল থেরাপি: হাত দিয়ে পেশী শিথিল করার পদ্ধতি।

৫. ব্যায়াম ও শিথিলকরণ: শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অন্যান্য পেশী শিথিল করার ব্যায়াম শেখানো হয়।


পেলভিক ফ্লোর থেরাপির উপকারিতা

  • মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: IBS রোগীদের মধ্যে বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া-সংক্রান্ত সমস্যায় এই থেরাপি অনেক সাহায্য করে।

  • ব্যথা ও অস্বস্তি কমানো: পেলভিক ফ্লোরের পেশীর টান এবং সংকোচন কমিয়ে পেটের নিচের অংশে ব্যথা কমানো সম্ভব।

  • মানসিক চাপ কমানো: নিয়মিত শিথিলকরণ পদ্ধতি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করে, যা IBS-এর উপসর্গ উন্নত করতে পারে।

  • জীবনের মান বৃদ্ধি: নিয়মিত পেলভিক ফ্লোর থেরাপির মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি ও আরাম অনুভব করা যায়।


পেলভিক ফ্লোর থেরাপি কখন করবেন?

  • মলত্যাগে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে

  • পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা বা চাপ অনুভব করলে

  • কোলন বা অন্ত্রের অস্বাভাবিকতা বা IBS-এর কারণে সমস্যা হলে

  • মূত্রত্যাগ বা মলত্যাগে সমস্যা হলে


বাড়িতে করণীয়

পেলভিক ফ্লোর থেরাপির পাশাপাশি বাড়িতে কিছু সহজ অনুশীলন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন IBS রোগীদের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে:

  • নিয়মিত পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ (যেমন কেগেল এক্সারসাইজ)

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • পর্যাপ্ত জলপান

  • মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন বা শিথিলকরণ কৌশল

  • নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম


সতর্কতা ও পরামর্শ

  • পেলভিক ফ্লোর থেরাপি শুরু করার আগে একজন যোগ্য থেরাপিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

  • নিজে থেকে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে পেশীকে অনুশীলন করানো উচিত নয়, কারণ এটি উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে।

  • থেরাপির ফলে ধৈর্য্য ধরে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে কারণ দ্রুত ফলাফল আশা করা উচিত নয়।


উপসংহার

IBS-এর জটিল উপসর্গ যেমন পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া অনেক সময় পেলভিক ফ্লোরের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত। পেলভিক ফ্লোর থেরাপি সেই সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত কার্যকরী ও নিরাপদ পদ্ধতি। নিয়মিত থেরাপি এবং বাড়িতে সঠিক যত্ন নিলে IBS রোগীরা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারেন।

আপনি যদি IBS বা অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে পেলভিক ফ্লোর থেরাপির জন্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে পারেন এবং আপনার সমস্যা অনুযায়ী উপযুক্ত থেরাপি শুরু করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *