অ্যাসবেস্টোসিস (বা অ্যাসবেস্টজনিত ফুসফুসের রোগ)

অ্যাসবেস্টোসিস কী?

অ্যাসবেস্টোসিস হলো এক ধরনের ফুসফুসের রোগ, যা ঘটে যখন অ্যাসবেস্ট (asbestos) নামক খনিজের সূক্ষ্ম আঁশ বা কণাগুলো ফুসফুসে জমে গিয়ে টিস্যুতে দাগ বা চিরস্থায়ী ক্ষত তৈরি করে। এই দাগ ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে:

  • শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়

  • শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি হয়

এই রোগের অন্যান্য নাম হলো:

  • পালমোনারি ফাইব্রোসিস (Pulmonary Fibrosis)

  • ইন্টারস্টিশিয়াল নিউমোনাইটিস (Interstitial Pneumonitis)

কীভাবে অ্যাসবেস্টোসিস হয়?

অ্যাসবেস্টোসিস সাধারণত হয় এমন কর্মক্ষেত্রে, যেখানে মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে অ্যাসবেস্ট ধূলার সংস্পর্শে থাকে। এটি ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রিত না থাকায় বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

রোগের প্রকৃতি:

  • এই রোগ ধীরে ধীরে বিকাশ ঘটে

  • লক্ষণগুলো সাধারণত বছরের পর বছর পর প্রকাশ পায়

  • রোগটি জীবন-সংকটজনক হতে পারে

পরিসংখ্যান:

যুক্তরাষ্ট্রের টক্সিক সাবস্ট্যান্স ও ডিজিজ রেজিস্ট্রির সংস্থা (ATSDR) অনুযায়ী,
২০৩০ সালের মধ্যে অ্যাসবেস্ট-সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে

অ্যাসবেস্টোসিসের উপসর্গ চিনে নেওয়া

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অ্যাসবেস্টোসিসের উপসর্গ দেখা দিতে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে (সাধারণত ১০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে)। এটি অত্যন্ত ধীরগতির একটি রোগ।

সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:

  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া (শ্বাসকষ্ট)

  • বুকে চাপ অনুভব করা

  • একটানা শুকনো কাশি

  • বুকের ব্যথা

  • ক্ষুধামান্দ্য বা ক্ষুধা কমে যাওয়া

  • ফিঙ্গার ক্লাবিং – অর্থাৎ আঙুলের আগা মোটা ও গোল হয়ে যাওয়া

  • নখের আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়া

এই উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে আরও খারাপ হতে পারে। যদি কেউ অতীতে অ্যাসবেস্টে কাজ করে থাকেন বা সংস্পর্শে এসে থাকেন, তাহলে এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি

অ্যাসবেস্টোসিসের কারণ ও ঝুঁকি عوامل

অ্যাসবেস্টোসিস হয় যখন আপনি অ্যাসবেস্টের সূক্ষ্ম আঁশ শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করান এবং এই আঁশগুলো ফুসফুসের টিস্যুতে আটকে গিয়ে ক্ষত (scar tissue) তৈরি করে। এই ক্ষতই হলো অ্যাসবেস্টোসিস।

  • এই ক্ষত হওয়ায় ফুসফুসের টিস্যু স্বাভাবিকভাবে প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে না, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

  • যারা ১৯৭০-এর দশকের আগে এমন শিল্পখাতে কাজ করেছেন যেখানে অ্যাসবেস্টের ব্যবহার ছিল (যেমন: নির্মাণ, ফায়ারপ্রুফিং), তাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

  • যদিও এখন অ্যাসবেস্টের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত, তবে কিছু শিল্পে এখনও এটি ব্যবহৃত হয় এবং সরকার অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (OSHA) দ্বারা কঠোর নজরদারিতে থাকে।

  • ধূমপান করলে অ্যাসবেস্টোসিস এবং অন্যান্য সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়ে।


অ্যাসবেস্টোসিস নির্ণয় ও পরীক্ষা

ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন অ্যাসবেস্টোসিস আছে কি না এবং অন্য কোনো রোগ (যাদের উপসর্গ মিলতে পারে) আছে কি না তা দেখেন। পরীক্ষাগুলো সাধারণত হয়:

  • শারীরিক পরীক্ষায় স্টেথোস্কোপ দিয়ে ফুসফুসের অস্বাভাবিক শব্দ শোনা।

  • এক্স-রে (X-ray): ফুসফুস বা বুকে সাদা বা হানিকম্ব (মৌমাছির ছাঁচের মতো) আকৃতি দেখা যায় কি না তা পরীক্ষা করা হয়।

  • পালমোনারি ফাংশন টেস্ট (Pulmonary function test): এতে মাপা হয় আপনি কত পরিমাণ বায়ু শ্বাসের মাধ্যমে নিতে পারেন এবং ফুসফুসে বায়ুর গতি কেমন।

  • অক্সিজেন ট্রান্সফার টেস্ট: ফুসফুস থেকে রক্তে কতটুকু অক্সিজেন যাচ্ছে তা দেখা হয়।

  • সিটি স্ক্যান (CT scan): ফুসফুসের আরও বিস্তারিত ছবি নেওয়া হয়।

  • বায়োপসি (Biopsy): ফুসফুসের টিস্যুর নমুনা নিয়ে অ্যাসবেস্টের আঁশ আছে কিনা তা খুঁজে দেখা হয়।

এই পরীক্ষাগুলো মিলিয়ে ডাক্তার রোগের সঠিক ধরণ নির্ণয় করেন এবং তার ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করেন

অ্যাসবেস্টোসিসের চিকিৎসার উপায়

অ্যাসবেস্টোসিস সম্পূর্ণরূপে সেরে ওঠার যোগ্য নয়, তবে কিছু চিকিৎসা উপায় রয়েছে যা উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে বা কমাতে সাহায্য করে।

  • প্রেস্ক্রিপশন ইনহেলার ব্যবহার করে ফুসফুসের ভিতরের জমে থাকা কফ ঢিলেঢালা করা যায়।

  • যদি রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে, তবে নাকের ভিতরে লাগানো মাস্ক বা টিউবের মাধ্যমে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।

  • রোগের অবস্থা খারাপ হওয়া থেকে রোধ করতে, আরও অ্যাসবেস্টের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং ধূমপান ত্যাগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • রোগটি গুরুতর হলে ফুসফুসের ট্রান্সপ্লান্ট (lung transplant) করাও এক ধরনের চিকিৎসার অপশন হতে পারে।


অ্যাসবেস্টোসিসের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল এবং জটিলতা

  • অ্যাসবেস্টের সংস্পর্শ ম্যালিগন্যান্ট মেসোথেলিওমা নামক একটি গুরুতর ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

  • ধূমপান করলে অন্য ধরনের ফুসফুসের ক্যান্সারও হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

  • ফুসফুসের চারপাশে তরল জমে যাওয়া, যা প্লিউরাল ইফিউশন নামে পরিচিত, সেটাও অ্যাসবেস্টের সংস্পর্শের সঙ্গে যুক্ত।

  • রোগের তীব্রতা নির্ভর করে কতক্ষণ এবং কত পরিমাণে আপনি অ্যাসবেস্টের সংস্পর্শে ছিলেন তার ওপর।

  • অ্যাসবেস্টের সংস্পর্শ বন্ধ করার পর রোগটির উন্নতি ধীরগতি হবে। যারা জটিলতা ছাড়াই এই রোগে আক্রান্ত তারা বহু বছর বেঁচে থাকতে পারেন।

    যদি আপনি অ্যাসবেস্টের সংস্পর্শে থাকেন, তাহলে করণীয়

    • যদি আপনি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অ্যাসবেস্টের সংস্পর্শে থাকেন, তাহলে প্রতি ৩ থেকে ৫ বছরে আপনার ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেস্ট এক্স-রে এবং স্ক্রিনিং করানো উচিত

    • আপনার কাজের সময় সব ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করুন এবং নিরাপত্তা নির্দেশিকা কঠোরভাবে মানুন, বিশেষ করে যদি আপনার কাজ নিয়মিত অ্যাসবেস্টের সংস্পর্শ ঘটায়।

    • নিয়োগকর্তাদের অবশ্যই কাজের পরিবেশে অ্যাসবেস্টের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অঞ্চলেই অ্যাসবেস্টের সঙ্গে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে।

    • ফেডারেল আইন অনুযায়ী কর্মস্থলে ডিকন্টামিনেশন এরিয়া থাকতে হবে এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ সেশন নিয়মিত করানো বাধ্যতামূলক।

    • নিয়মিত মেডিকেল পরীক্ষা করানোও ফেডারেল আইনের আওতায় আসে, যা অ্যাসবেস্টোসিসের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণে সহায়ক।

    • যদি মনে করেন আপনার নিয়োগকর্তা এই মানদণ্ড মেনে চলছে না, তাহলে নিকটস্থ OSHA অফিসে যোগাযোগ করুন। তারা আপনার কর্মক্ষেত্র পরীক্ষা করতে পারে, স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য দিতে পারে এবং জরুরি পরিস্থিতি বা কর্মস্থলের দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে রাখে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *