ক্রোনস ডিজিজ একটি প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ (IBD), যা স্বয়ংক্রিয় রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেরই পাচনতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করে, ফলে পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, ওজন হ্রাসসহ নানা উপসর্গ দেখা যায়। ক্রোনস ডিজিজ থাকলে অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। নিচে ক্রোনস ডিজিজের সাথে সম্পর্কিত কিছু সাধারণ স্বয়ংক্রিয় রোগের বিবরণ দেওয়া হলো:
১. প্রদাহজনক আর্থ্রাইটিস (Inflammatory Arthritis)
ক্রোনস ডিজিজের প্রায় ২০% রোগীর প্রদাহজনক আর্থ্রাইটিস হয়। এটি মূলত হাঁটু, কনুই, কব্জি ও গোড়ালির মতো বড় জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলাভাব সৃষ্টি করে। এই আর্থ্রাইটিস সাধারণত অস্থায়ী এবং ক্রোনসের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখলে এটি কমে যায়।
২. সোরিয়াসিস (Psoriasis)
সোরিয়াসিস একটি ত্বকের স্বয়ংক্রিয় রোগ, যা ত্বকে লালচে, খসখসে প্যাচ সৃষ্টি করে। ক্রোনস ডিজিজের রোগীদের মধ্যে সোরিয়াসিসের ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ উভয় রোগেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জড়িত।
৩. মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis)
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS) একটি স্নায়ুতন্ত্রের স্বয়ংক্রিয় রোগ, যা স্নায়ুর আশেপাশের মাইলিন আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রোনস বা আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো IBD রোগীদের MS হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেশি।
৪. লুপাস (Lupus)
লুপাস একটি জটিল স্বয়ংক্রিয় রোগ, যা ত্বক, জয়েন্ট, কিডনি, হৃদয়সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে। ক্রোনস ডিজিজের রোগীদের মধ্যে লুপাসের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়।
৫. শ্বাসযন্ত্রের রোগ (Respiratory Diseases)
ক্রোনস ডিজিজের রোগীদের মধ্যে হাঁপানি ও অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহজনক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রোগগুলিও স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়ার ফলাফল হতে পারে।
৬. অস্থি ঘনত্ব হ্রাস (Low Bone Density)
ক্রোনস ডিজিজের কারণে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি শোষণে সমস্যা হতে পারে, ফলে অস্টিওপোরোসিস বা অস্থি ঘনত্ব হ্রাসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি হাড় ভঙ্গুর করে তোলে এবং ভাঙার সম্ভাবনা বাড়ায়।
৭. অন্যান্য সম্পর্কিত অবস্থা
ক্রোনস ডিজিজের সাথে আরও কিছু স্বয়ংক্রিয় বা প্রদাহজনক রোগের সম্পর্ক থাকতে পারে, যেমন:
সেলিয়াক ডিজিজ: গ্লুটেন সংবেদনশীলতা জনিত অন্ত্রের রোগ।
অটোইমিউন হেপাটাইটিস: যকৃতের স্বয়ংক্রিয় প্রদাহজনক রোগ।
প্যানক্রিয়াটাইটিস: অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ, যা IBD রোগীদের মধ্যে দেখা যেতে পারে।
ব্যবস্থাপনা পরামর্শ
নিয়মিত চিকিৎসক পরামর্শ: ক্রোনস ডিজিজ ও সম্পর্কিত স্বয়ংক্রিয় রোগগুলির জন্য নিয়মিত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ও রিউম্যাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সুষম খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ করুন, যা অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে।
চিকিৎসা নিয়ম মেনে চলা: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ক্রোনস ডিজিজ একটি জটিল রোগ, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে এটির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যদি আপনার ক্রোনস ডিজিজ থাকে বা উপসর্গ অনুভব করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।