আলসারেটিভ কোলাইটিস ফ্লেয়ার-আপ কেন হয়?
আলসারেটিভ কোলাইটিস (UC) ফ্লেয়ার-আপ বা উপসর্গের হঠাৎ অবনতি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন কিছু ওষুধ, মানসিক চাপ ও নির্দিষ্ট খাবার। ফ্লেয়ার নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।
আলসারেটিভ কোলাইটিস (UC) হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ (IBD)। এটি বৃহৎ অন্ত্রে প্রদাহ এবং আলসার সৃষ্টি করে।
সাধারণত, UC-এর উপসর্গ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খারাপ হয়, তবে মাঝে মাঝে উপসর্গ হালকা হয়ে যেতে পারে বা একেবারে বন্ধ থাকতে পারে। এই অবস্থাকে রেমিশন বলা হয়।
অনেক সময় UC রোগীদের নির্দিষ্ট কিছু ট্রিগার থাকে, যা ফ্লেয়ার ঘটাতে পারে। তাই, ফ্লেয়ার এলে বুঝতে হবে কী কারণে এটি হলো এবং কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায়।
UC ফ্লেয়ার কী?
UC ফ্লেয়ার হলো অন্ত্রের প্রদাহজনিত উপসর্গের হঠাৎ খারাপ হয়ে যাওয়া। এটি সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরের ব্যবধানে ঘটতে পারে, এবং তীব্রতা ভিন্ন হয়।
জীবনযাপন পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধ ফ্লেয়ারের কারণ হতে পারে। ঠিকভাবে ওষুধ খাওয়া, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং ট্রিগার এড়ানো ফ্লেয়ার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সাধারণ উপসর্গ
ফ্লেয়ারের তীব্রতা ও অন্ত্রে প্রদাহের অবস্থানের ওপর উপসর্গ নির্ভর করে। সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:
রক্তমিশ্রিত ডায়রিয়া
মলত্যাগের চাপ অনুভব, যদিও পেট খালি
দ্রুত মলত্যাগের প্রয়োজন
পেট ব্যথা বা ক্র্যাম্প
ক্লান্তিভাব
জ্বর
ওজন হ্রাস
রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)
জয়েন্টে ব্যথা, চোখে জ্বালা, মুখে ঘা (কখনও)
ফ্লেয়ার কতদিন স্থায়ী হয়?
ফ্লেয়ার কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দুইটি ফ্লেয়ারের মাঝে সপ্তাহ থেকে বছর পর্যন্ত বিরতি হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা UC কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় UC
Crohn’s & Colitis Foundation সুপারিশ করে যে, গর্ভধারণের আগে অন্তত ৩ মাস UC রেমিশনে থাকা উচিত।
ফ্লেয়ারের সময় গর্ভধারণ করলে উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে। UC রোগীদের সাধারণত সুস্থ গর্ভাবস্থা হয়, তবে কিছু ঝুঁকি বেশি থাকে, যেমন:
মিসক্যারেজ (গর্ভপাত)
প্রি-ম্যাচিউর বার্থ (অকাল প্রসব)
শিশুর কম ওজন
প্রসবের জটিলতা
UC ওষুধ সাধারণত গর্ভাবস্থায় নেওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ফ্লেয়ার ব্যবস্থাপনা
রেমিশন থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করুন।
ফ্লেয়ার শুরু হলে কারণ নির্ধারণের জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। তিনি ওষুধ পরিবর্তন করতে পারেন।
উপসর্গ কমাতে:
টয়লেট পেপারের বদলে ওয়াইপ ব্যবহার করুন
রাতে স্কিন প্রটেক্টেন্ট লাগান
ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল (Acetaminophen) নিতে পারেন
সাধারণ ট্রিগার
UC ফ্লেয়ারের সাধারণ কারণসমূহ:
ওষুধ: যেমন অ্যান্টিবায়োটিক বা NSAIDs (ইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন)
স্ট্রেস: মানসিক চাপ অনেক সময় প্রদাহ বাড়ায়
খাদ্য: কিছু খাবার উপসর্গ বাড়াতে পারে
ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করা: বিশেষত স্টেরয়েড
হরমোন পরিবর্তন: ঋতুচক্র বা গর্ভাবস্থায়
ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা: ডায়রিয়া ইত্যাদি
খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ
ফ্লেয়ারের সময় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন উপসর্গ কমাতে পারে।
খাবার যেগুলো খেতে পারেন:
রান্না করা শাকসবজি ও ফল
সহজে হজমযোগ্য খাদ্য
প্রচুর পানি পান
ঘন ঘন অল্প খাবার খান
খাবার যেগুলো এড়ানো উচিত:
কোমল পানীয় ও মিষ্টি পানীয়
দুগ্ধজাত খাবার
কাঁচা ফল ও সবজি
মসলা ও ঝাল খাবার
ভাজা খাবার
অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন
ফুড ডায়েরি রাখলে কোন খাবার সমস্যার সৃষ্টি করে তা চিহ্নিত করা সহজ হয়।
তরল খাদ্য
গুরুতর ফ্লেয়ারের সময় তরল খাদ্য বা টিউব ফিডিং লাগতে পারে।
ফ্লেয়ার রোধের উপায়
সম্পূর্ণভাবে ফ্লেয়ার বন্ধ করা সম্ভব নয় (সার্জারি ছাড়া), তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো:
Aminosalicylates (5-ASA) – প্রদাহ কমায়
Tofacitinib (JAK inhibitor) – ইমিউন সিস্টেম দমন করে
Corticosteroids – তীব্র UC-তে কার্যকর, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে
Immunomodulators – ইমিউন প্রতিক্রিয়া কমায়
Biologics – TNF-alpha ইনহিবিট করে
Antibiotics – সংক্রমণের ক্ষেত্রে
ব্যথার জন্য acetaminophen (প্যারাসিটামল) নিরাপদ।
NSAIDs যেমন ইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন এড়িয়ে চলুন।
প্রাকৃতিক উপশম
স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, ব্যায়াম করুন
প্রোবায়োটিক + 5-ASA — গবেষণায় কার্যকারিতা দেখা গেছে
হলুদ/কারকিউমিন – উপসর্গ ও জীবনের মান উন্নত করতে সহায়ক
সার্জারি
যখন অন্যান্য চিকিৎসায় কাজ হয় না বা গুরুতর জটিলতা হয়, তখন proctocolectomy (পুরো কোলন ও রেকটাম অপসারণ) প্রয়োজন হতে পারে।
এরপর হয়:
Ileostomy – মল বের করার জন্য পেটের বাইরে একটি খোলার মাধ্যমে ব্যাগ
Ileoanal pouch – শরীরের ভিতরে মল জমিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিম পাউচ
কখন ডাক্তার দেখাবেন
চিকিৎসা জরুরি যদি আপনি:
মলে রক্তের দলা দেখেন
দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া থাকে
উচ্চ জ্বর থাকে
কিছু খেতে না পারেন
লাগাতার ব্যথা থাকে
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১. UC ফ্লেয়ার কেমন অনুভূত হয়?
পেটব্যথা, ক্লান্তি, জ্বর, জয়েন্ট ব্যথা, চোখ ও মুখে জ্বালা।
২. ব্যথা কমানোর উপায় কী?
Acetaminophen ব্যবহার করা নিরাপদ।
৩. UC কতটা খারাপ হতে পারে?
Fulminant UC — দিনে ১০ বারের বেশি রক্তমিশ্রিত মলত্যাগ, জ্বর, দ্রুত হার্টবিট, অ্যানিমিয়া। এতে হাসপাতালে ভর্তি লাগতে পারে।
সারাংশ
UC-এর কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
নিয়মিত ওষুধ সেবন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ট্রিগার এড়ালে ফ্লেয়ার কম হয়।
সঠিক চিকিৎসায় মাস বা বছরের পর বছর উপসর্গ ছাড়াই থাকা সম্ভব।