আলসারেটিভ কোলাইটিস: চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলার টিপস
আলসারেটিভ কোলাইটিস একটি প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ (IBD) যা বড় অন্ত্র, কোলন ও রেকটামকে প্রভাবিত করে। এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে অন্ত্রের দেয়ালে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
এই রোগের নিরাময় নেই, তবে চিকিৎসা দ্বারা উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা রোগীদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং তা মোকাবিলার উপায় তুলে ধরা হলো:
১. অ্যাকনে (Acne)
কারণ: কোর্টিকোস্টেরয়েডস, ইমিউনোমডুলেটরস।
মোকাবিলা: ওষুধ বন্ধ করলে সাধারণত অ্যাকনে চলে যায়। ডাক্তার ত্বকের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ক্রিম বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
২. উদ্বেগ ও নার্ভাসনেস
কারণ: অ্যান্টিবায়োটিকস, কোর্টিকোস্টেরয়েডস।
মোকাবিলা: এই উপসর্গগুলো যদি সমস্যা সৃষ্টি করে, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। তারা ডোজ সমন্বয় করতে পারেন।
৩. ক্ষুধামান্দ্য
কারণ: অ্যামিনোস্যালিসিলেটস, অ্যান্টিবায়োটিকস, ইমিউনোমডুলেটরস, কোর্টিকোস্টেরয়েডস।
মোকাবিলা: অ্যাবডোমিনাল পেইন ও বমি বমি ভাবের কারণে ক্ষুধা কমে যেতে পারে। ডায়েটিশিয়ান বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
৪. পেট ব্যথা ও ক্র্যাম্পস
কারণ: অ্যামিনোস্যালিসিলেটস, অ্যান্টিবায়োটিকস, বায়োলজিকস, ইমিউনোমডুলেটরস।
মোকাবিলা: ওষুধ খাওয়ার আগে বা খাবারের সাথে খেলে পেটের অস্বস্তি কমাতে পারে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য
কারণ: অ্যামিনোস্যালিসিলেটস, ইমিউনোমডুলেটরস।
মোকাবিলা: পর্যাপ্ত পানি পান করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, এবং ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করে খাবার নির্বাচন করুন।
৬. ডায়রিয়া
কারণ: অ্যামিনোস্যালিসিলেটস, অ্যান্টিবায়োটিকস, ইমিউনোমডুলেটরস।
মোকাবিলা: ওভার-দ্য-কাউন্টার অ্যান্টিডায়রিয়াল ওষুধ বা অ্যান্টিস্পাসমডিক ড্রাগ ব্যবহার করতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করুন।
৭. মাথাব্যথা
কারণ: অ্যামিনোস্যালিসিলেটস, অ্যান্টিবায়োটিকস, বায়োলজিকস, কোর্টিকোস্টেরয়েডস, ইমিউনোমডুলেটরস।
মোকাবিলা: অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ওভার-দ্য-কাউন্টার পেইন রিলিভার ব্যবহার করতে পারেন। মাথাব্যথা যদি বারবার হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
৮. সংক্রমণ
কারণ: অ্যামিনোস্যালিসিলেটস, ইমিউনোমডুলেটরস, বায়োলজিকস, কোর্টিকোস্টেরয়েডস, অ্যান্টিবায়োটিকস।
মোকাবিলা: প্রতিরোধমূলক টিকা গ্রহণ করুন, এবং সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
৯. ঘুমের সমস্যা
কারণ: অ্যান্টিবায়োটিকস, কোর্টিকোস্টেরয়েডস, ইমিউনোমডুলেটরস।
মোকাবিলা: নিয়মিত ব্যায়াম করুন, এবং ঘুমের সময়সূচি ঠিক রাখুন। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধের সময় পরিবর্তন করতে পারেন।
১০. হাড়ের দুর্বলতা (অস্টিওপোরোসিস)
কারণ: কোর্টিকোস্টেরয়েডস।
মোকাবিলা: ভিটামিন D এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন, ওজন বহনকারী ব্যায়াম করুন, এবং ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
১১. ওজন বৃদ্ধি
কারণ: কোর্টিকোস্টেরয়েডস।
মোকাবিলা: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন।
মোট কথা: ডাক্তার প্রতিবার নতুন ওষুধ প্রেসক্রাইব করার সময়, সেই ওষুধ কিভাবে সাহায্য করবে এবং কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা জানুন। যদি কোন সমস্যা স্থায়ী হয় বা অস্বস্তিকর হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।