আলসারেটিভ কোলাইটিস হলো একটি প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ (IBD)। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা অতিসক্রিয় হয়ে বৃহৎ অন্ত্র (কলন ও রেকটামসহ) আক্রমণ করে এবং সেগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহের ফলে পেট ব্যথা, ডায়রিয়া এবং দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
এই রোগের কোনও স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং পুনরায় উদ্ভব (flare-up) রোধ করা সম্ভব।
চিকিৎসা ও ওষুধ
চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শান্ত করে প্রদাহ কমায়। অন্যগুলো নির্দিষ্ট উপসর্গ যেমন ডায়রিয়া, ফাঁপা ভাব ইত্যাদি উপশম করে।
সাধারণ ওষুধসমূহ:
ডায়রিয়া কমানোর ওষুধ: লোপেরামাইড (Imodium)
ব্যথানাশক: অ্যাসিটামিনোফেন (Tylenol), NSAIDs (অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন)
অ্যামিনোসালিসাইলেটস: সালফাসালাজিন, মেসালামিন, বাসালাজাইড, অলসালাজিন
কর্টিকোস্টেরয়েডস: প্রেডনিসোন, প্রেডনিসোলোন, মেথাইলপ্রেডনিসোলোন, বুডেসোনাইড
ইমিউনোমডুলেটরস: আজাথিওপ্রিন, সাইক্লোসপরিন, ট্যাক্রোলিমাস, ৬-মার্কাপ্টোপিউরিন (6-MP), মেথোট্রেক্সেট
বায়োলজিক ওষুধ: অ্যাডালিমুম্যাব (Humira), ইনফ্লিক্সিম্যাব (Remicade)
JAK ইনহিবিটরস: টোফাসিটিনিব (Xeljanz)
অ্যান্টিবায়োটিক: সিপ্রোফ্লক্সাসিন (Cipro), মেট্রোনিডাজল (Flagyl), রিফাক্সিমিন (Xifaxan)
এই ওষুধগুলোর কিছু হালকা থেকে মাঝারি এবং কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ডাক্তার এমন চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন যা উপসর্গ কমাবে এবং সহনীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রাখবে।
আপনার লক্ষণ ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই নিয়মিত আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সেগুলোর ব্যবস্থাপনা
ব্রণ
কারণ হতে পারে: কর্টিকোস্টেরয়েড, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: ওষুধ বন্ধ করলে ব্রণ কমে যেতে পারে। ততদিন ডার্মাটোলজিক ক্রিম বা অ্যান্টিবায়োটিক সাহায্য করতে পারে।
উদ্বেগ/স্নায়বিকতা
কারণ: অ্যান্টিবায়োটিক, কর্টিকোস্টেরয়েড
ব্যবস্থা: ডোজ কমানোর জন্য ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
ক্ষুধামান্দ্য
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, অ্যান্টিবায়োটিক, ইমিউনোমডুলেটর, কর্টিকোস্টেরয়েড
ব্যবস্থা: ক্ষুধামান্দ্য থাকলে পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ক্যালরি ও পুষ্টি নিশ্চিত করুন।
পেট ব্যথা ও ক্র্যাম্প
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, অ্যান্টিবায়োটিক, বায়োলজিক, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: খাওয়ার সময় ওষুধ নেওয়ার বিষয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: বেশি পানি পান, ব্যায়াম, প্রয়োজনে ল্যাক্সেটিভ।
ডায়রিয়া
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, অ্যান্টিবায়োটিক, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ, অ্যান্টিস্পাসমডিক, পানি ও তরল গ্রহণ।
এড়িয়ে চলার মতো খাবার:
ঝাল বা চর্বিযুক্ত খাবার
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (শস্য, কিছু ফলমূল ও সবজি)
দুগ্ধজাত দ্রব্য
ক্যাফেইন
মাথা ঘোরা
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, কর্টিকোস্টেরয়েড, ইমিউনোমডুলেটর, বায়োলজিক
ব্যবস্থা: বিশ্রাম, মাথা উঁচু করে ঘুমানো, বিপজ্জনক কাজ এড়ানো।
মুখ শুকিয়ে যাওয়া
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট
ব্যবস্থা: মাউথওয়াশ বা কৃত্রিম লালা ব্যবহার করুন।
গ্যাস
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: গ্যাস তৈরি করা খাবার এড়ানো যেমন ব্রোকলি, বাঁধাকপি, দুধ, চর্বিযুক্ত খাবার, কৃত্রিম মিষ্টি। Simethicone সাহায্য করতে পারে।
মাথাব্যথা
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, অ্যান্টিবায়োটিক, বায়োলজিক, কর্টিকোস্টেরয়েড, JAK ইনহিবিটর
ব্যবস্থা: অ্যাসিটামিনোফেন ব্যবহার, যদি ঘন ঘন হয় তবে ডাক্তারকে জানান।
অম্বল/রিফ্লাক্স
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, অ্যান্টিবায়োটিক, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: টক, চকোলেট, অ্যালকোহল এড়ানো, শোবার আগে খাওয়া না, ধূমপান না করা।
ইনফিউশন রিঅ্যাকশন
কারণ: বায়োলজিক ওষুধ
ব্যবস্থা: ইনফিউশনের সময় সজাগ থাকা, প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়া।
ইনজেকশনের স্থান ফুলে যাওয়া
কারণ: বায়োলজিক ওষুধ
ব্যবস্থা: সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়। দীর্ঘস্থায়ী হলে ডাক্তারকে জানান।
গাঁটে বা মাংসে ব্যথা
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, বায়োলজিক, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: গরম প্যাড, ব্যথানাশক, দীর্ঘস্থায়ী হলে ওষুধ পরিবর্তন।
বমি ও বমিভাব
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, অ্যান্টিবায়োটিক, বায়োলজিক, কর্টিকোস্টেরয়েড, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: ছোট ছোট খাবার, ধীরে খাওয়া, তেল চর্বিযুক্ত খাবার এড়ানো, হালকা খাবার খাওয়া।
সংক্রমণ
কারণ: অ্যামিনোসালিসাইলেট, ইমিউনোমডুলেটর, বায়োলজিক, কর্টিকোস্টেরয়েড, JAK ইনহিবিটর
ব্যবস্থা: টিকা আপডেট রাখা, সংক্রমণের লক্ষণ হলে রিপোর্ট করুন: জ্বর, কাশি, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, রক্তমিশ্রিত পায়খানা।
ঘুমের সমস্যা
কারণ: অ্যান্টিবায়োটিক, কর্টিকোস্টেরয়েড, ইমিউনোমডুলেটর
ব্যবস্থা: প্রতিদিন ব্যায়াম, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম, স্ক্রিন টাইম এড়ানো, ওষুধের সময় পরিবর্তন।
হাড় ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস)
কারণ: কর্টিকোস্টেরয়েড
ব্যবস্থা: ক্যালসিয়াম-ভিটামিন ডি গ্রহণ, ওজন বহনকারী ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ এড়ানো, হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা।
ওজন বৃদ্ধি
কারণ: কর্টিকোস্টেরয়েড
ব্যবস্থা: ওষুধ বন্ধ করলে কমে যায়। ওষুধ চলাকালে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম চালিয়ে যান।
সারসংক্ষেপ
প্রতিবার নতুন চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধের কাজ এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন। অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সময়ের সাথে কমে যায়। দীর্ঘস্থায়ী হলে বা অসহ্য লাগলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে ওষুধ পরিবর্তন করুন।