IBS আক্রমণ কতদিন স্থায়ী হয় — এটি এমন একটি প্রশ্ন যা অনেক ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) আক্রান্ত রোগীর মনে জাগে। IBS একটি দীর্ঘমেয়াদী অন্ত্র সমস্যা, যার উপসর্গ হঠাৎ করে শুরু হয়ে আবার কিছু সময় পর কমে যেতে পারে। তবে এটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। এজন্য জানা জরুরি, প্রতিটি IBS আক্রমণ সাধারণত কতদিন স্থায়ী হয় এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আইবিএস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপসর্গের সময়কাল ও তীব্রতা রোগীভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু বৈজ্ঞানিক সূত্র থেকে গড় হিসেব নির্ণয় করা যায়। বিস্তারিত জানতে Mayo Clinic-এর IBS পৃষ্ঠা ঘুরে দেখতে পারেন।
IBS আক্রমণ কতদিন স্থায়ী হয়: গড় সময়কাল
প্রথমেই জানিয়ে রাখা ভালো, IBS আক্রমণ কতদিন স্থায়ী হয় তার নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই। কিন্তু সাধারণভাবে:
-
একটি ফ্লেয়ার-আপ ২-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে।
-
কিছু ক্ষেত্রে আক্রমণ ১-২ সপ্তাহ পর্যন্তও চলতে পারে।
-
মাঝেমধ্যে মাসব্যাপী চলা দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গও দেখা যায়।
উপসর্গের প্রকৃতি ও জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে এই সময়কাল কমে বা বাড়তে পারে।
IBS আক্রমণের সাধারণ লক্ষণ
IBS আক্রমণ কতদিন স্থায়ী হয় তা বোঝার জন্য আগে এর সাধারণ উপসর্গগুলো বুঝে নেওয়া জরুরি।
🔹 পেট ব্যথা ও ক্র্যাম্প
আক্রমণের সময় পেটের নিচের অংশে তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা হয়।
🔹 ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
IBS-D ও IBS-C দুই ধরনেরই ফ্লেয়ার-আপে এই উপসর্গ দেখা যায়। কারো ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বেশি হয়, আবার কারো ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য।
🔹 গ্যাস ও ফোলাভাব
পেট ফুলে থাকে এবং অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে অস্বস্তি বাড়ে।
🔹 ক্লান্তি ও ঘুমের সমস্যা
লম্বা সময় ধরে চলা IBS ফ্লেয়ার-আপ মানসিক চাপ ও শারীরিক ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
আরও উপসর্গের বিস্তারিত জানতে পারেন Healthline এর IBS গাইড.
IBS আক্রমণের সময়কাল নির্ভর করে যেসব বিষয়ে
🔸 খাদ্যাভ্যাস
ফ্লেয়ার-আপের সময় যদি গম, দুধ, উচ্চ ফোডম্যাপযুক্ত খাবার গ্রহণ করা হয়, তবে আক্রমণের সময়কাল বেড়ে যেতে পারে।
🔸 মানসিক চাপ
চাপ ও উদ্বেগ IBS উপসর্গ বাড়িয়ে তোলে এবং ফ্লেয়ার দীর্ঘায়িত করে।
🔸 হরমোনাল পরিবর্তন
বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের সময় IBS উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে।
🔸 ওষুধ বা থেরাপি
সঠিক ওষুধ ও ডায়েট মেনে চললে আক্রমণের সময়কাল হ্রাস পায়। না মানলে তা দীর্ঘ হতে পারে।
সাবধানতার বিষয়: কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
যদি নিচের উপসর্গগুলো দীর্ঘদিন থাকে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
-
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
-
ওজন হ্রাস
-
বমি, রক্তপাত বা জ্বর
-
প্রতিটি IBS আক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হওয়া
IBS একটি জটিল রোগ। তাই NHS IBS গাইডলাইন অনুসারে চলা ভালো।
IBS আক্রমণ কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি
✅ লো-ফোডম্যাপ ডায়েট অনুসরণ
IBS উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে লো-ফোডম্যাপ ডায়েট। এই ডায়েট সম্পর্কে বিস্তারিত পেতে পারেন Monash University Low-FODMAP site-এ।
✅ মাইন্ডফুলনেস ও যোগ
নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম এবং গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস মানসিক চাপ কমায়, যা ফ্লেয়ার-আপ কমাতে সাহায্য করে।
✅ প্রোবায়োটিকস
সঠিক প্রোবায়োটিক স্ট্রেইন IBS এর ফ্লেয়ার সময়কাল ছোট করতে সহায়তা করে।
✅ পর্যাপ্ত পানি ও নিয়মিত ব্যায়াম
প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি ও হালকা ব্যায়াম IBS নিয়ন্ত্রণে রাখে।
চিকিৎসা পদ্ধতি যা আক্রমণের সময়কাল কমাতে সাহায্য করে
-
অ্যান্টি-স্পাসমোডিক ওষুধ: পেট ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়।
-
অ্যান্টি-ডায়রিয়াল: যেমন Imodium ডায়রিয়া কমায়।
-
ল্যাক্সেটিভস: কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক।
-
CBT (Cognitive Behavioral Therapy): মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ফ্লেয়ার কমায়।
আপনার চিকিৎসক আপনার উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করবেন।
উপসংহার
সুতরাং, IBS আক্রমণ কতদিন স্থায়ী হয় তা নির্ভর করে আপনার খাদ্যাভ্যাস, মানসিক অবস্থা, ওষুধের ব্যবহার এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর। সাধারণত একবারের আক্রমণ ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হতে পারে, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে তা দীর্ঘায়িত হতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসা ও সচেতনতা IBS এর আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।