ফাঁপা পেট, ব্যথা ও গ্যাসের জন্য কবে ডাক্তার দেখানো উচিত

ফাঁপা পেট ও অতিরিক্ত গ্যাস – কখন এটি চিন্তার বিষয়?

মাঝে মাঝে ফাঁপা পেট বা গ্যাস হওয়া খুবই সাধারণ। তবে, যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদি হজমজনিত সমস্যার লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে একজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা জরুরি।

বেশিরভাগ মানুষ জানেন ফাঁপা পেট কেমন অনুভূতি দেয়। পেটটি ফুলে থাকে, জামাকাপড় টাইট লাগে। হয়তো বড় কোনো উৎসবের খাবার খাওয়ার পর বা অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার পরে আপনি এই অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকবেন। মাঝে মাঝে এমনটা হওয়াটা স্বাভাবিক।

খাওয়ার পর ঢেঁকুর তোলা বা বায়ু নিঃসরণ করাও স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর বিষয়। সাধারণত একজন মানুষ দিনে ১৫ থেকে ২১ বার পর্যন্ত গ্যাস নির্গত করে।

কিন্তু যখন এই ফাঁপা ভাব, ঢেঁকুর এবং গ্যাস প্রতিদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, তখন এটি চিন্তার কারণ হতে পারে। যদি গ্যাস স্বাভাবিকভাবে অন্ত্রপথে না চলতে পারে, তবে মারাত্মক পেটব্যথা হতে পারে।

এই ধরনের অসুবিধার সঙ্গে আপনাকে বাঁচতে হবে না। সমস্যার সমাধানে প্রথম পদক্ষেপ হলো কারণটি চিহ্নিত করা।

নিচে অতিরিক্ত গ্যাস, ফাঁপা ভাব ও ব্যথার সম্ভাব্য কারণ এবং কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত তা দেওয়া হলো:


🍽 খাবারের প্রতিক্রিয়া

খাবারের সময় আপনি কিছুটা বাতাস গিলে ফেলেন। নিচের বিষয়গুলোতে আপনি বেশি বাতাস গিলে ফেলতে পারেন:

  • খাওয়ার সময় কথা বলা

  • খুব দ্রুত খাওয়া বা পান করা

  • কার্বনেটেড পানীয় পান করা

  • স্ট্র দিয়ে পান করা

  • চুইংগাম চিবানো বা হার্ড ক্যান্ডি খাওয়া

  • সঠিকভাবে না বসা দাঁতের ডেন্টার

বেশি গ্যাস তৈরিকারী খাবার:

  • শিম

  • ব্রকলি

  • বাঁধাকপি

  • ফুলকপি

  • ডাল

  • পেঁয়াজ

  • স্প্রাউটস

খাবার অসহিষ্ণুতা:

  • কৃত্রিম মিষ্টি যেমন ম্যানিটল, সরবিটল, জাইলিটল

  • ফাইবার সাপ্লিমেন্ট

  • গ্লুটেন

  • ফ্রুকটোজ

  • ল্যাকটোজ

👉 মাঝে মাঝে উপসর্গ হলে খাবারের ডায়েরি রাখতে পারেন, এতে কোন খাবার সমস্যা করছে তা বোঝা যাবে। যদি মনে হয় আপনার ফুড ইন্টলারেন্স বা অ্যালার্জি আছে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।


💩 কোষ্ঠকাঠিন্য

আপনি বুঝতেই নাও পারেন যে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, যতক্ষণ না আপনি ফাঁপা অনুভব করছেন। যত বেশি সময় পায়খানা না হয়, তত বেশি গ্যাস ও ফাঁপা পেটের সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণত এটি নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। আপনি চাইলে নিচের উপায়গুলো প্রয়োগ করতে পারেন:

  • খাবারে ফাইবার বাড়ান

  • বেশি পানি পান করুন

  • প্রয়োজন হলে ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) ওষুধ খেতে পারেন

👉 যদি কোষ্ঠকাঠিন্য ঘনঘন হয়, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।


🧬 এক্সোক্রাইন প্যানক্রিয়াটিক ইনসাফিসিয়েন্সি (EPI)

যদি আপনার অগ্ন্যাশয় হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে না পারে, তাহলে আপনি খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করতে পারবেন না।

উপসর্গগুলো হলো:

  • গ্যাস, ফাঁপা, পেটব্যথা

  • হালকা রঙের পায়খানা

  • তেলতেলে, দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা

  • টয়লেটে আটকে থাকা বা ভেসে থাকা পায়খানা

  • ক্ষুধা কমে যাওয়া

  • ওজন হ্রাস

  • অপুষ্টি

চিকিৎসা:

  • খাদ্য ও জীবনধারার পরিবর্তন

  • প্যানক্রিয়াটিক এনজাইম রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (PERT)


🌀 ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS)

IBS হলো দীর্ঘমেয়াদি বৃহদান্ত্রের একটি সমস্যা। এটি গ্যাসের প্রতি আপনার সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়।

উপসর্গ:

  • পেটব্যথা, ক্র্যাম্প, অস্বস্তি

  • ফাঁপা পেট

  • ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য

👉 এটি জীবনধারা পরিবর্তন, প্রোবায়োটিক ও ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট কী?

পেট ফাঁপা: কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top