আমরা অনেক সময় অনুভব করি যে হঠাৎ করে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। এটি আমাদের চিন্তিত করে তোলে—হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরি, কারণ এর পেছনে থাকতে পারে মানসিক, শারীরিক বা জটিল কোনো স্বাস্থ্যগত কারণ। আজকের লেখায় আমরা বিস্তারিত জানবো হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে।
হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় কেন? – মূল কারণসমূহ
হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া অনেক কারণে হতে পারে। নিচে আমরা সম্ভাব্য কারণগুলো আলোকপাত করছি:
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ (H3)
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ আমাদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভ সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে, যার ফলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে আমরা এটি অনুভব করি।
📌 আউটবাউন্ড লিংক: মনোবিদদের মতে মানসিক চাপের প্রভাব
২. অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও এলকোহল গ্রহণ
চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংক বেশি খেলে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। একইভাবে এলকোহলও কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে উত্তেজিত করে।
৩. ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম
কঠিন ব্যায়াম বা ভারী কাজ করলে সাময়িকভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, তবে এটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
৪. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
থাইরয়েড হরমোনের সমস্যার কারণে অনেক সময় হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। হাইপারথাইরয়েডিজমে এই উপসর্গটি বেশি দেখা যায়।
৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ যেমন ডিকনজেস্ট্যান্ট, ইনহেলার বা স্নায়ুর ওষুধ হৃদস্পন্দন বাড়াতে পারে।
৬. হৃদরোগ
AFib (Atrial Fibrillation), Arrhythmia ইত্যাদি হার্টের সমস্যার কারণে অনিয়মিত ও দ্রুত হৃৎস্পন্দন হয়।
📌 আউটবাউন্ড লিংক: Mayo Clinic-এর মতে Atrial Fibrillation এর লক্ষণ
⚠️ কখন চিন্তার কারণ হতে পারে?
সব হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বিপজ্জনক নয়, তবে নিচের উপসর্গগুলো থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
-
বুকে ব্যথা বা চাপ
-
মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়া
-
অতিরিক্ত ঘাম
-
শ্বাসকষ্ট
🧘 হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
যেহেতু হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় কেন তা বোঝা গেছে, এবার জানি কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১. মেডিটেশন ও যোগ ব্যায়াম
মেডিটেশন এবং প্রণায়াম হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট চর্চা করলে মানসিক চাপ কমে।
📌 আউটবাউন্ড লিংক: যোগ ব্যায়ামের উপকারিতা – Harvard Health
২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত পানি পান ও ফলমূল খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের অভাব স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে। তাই প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
৪. ওষুধ ও চিকিৎসা
যদি থাইরয়েড, হৃদরোগ বা অন্য কোনো রোগ থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।
📋 হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলে যা করবেন
-
ঠান্ডা পানি পান করুন
-
গভীর শ্বাস নিন ও ধীরে ছাড়ুন
-
চুপ করে বসে থাকুন
-
অ্যালকোহল, ধূমপান ও কফি এড়িয়ে চলুন
🤔 পাঠকের সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন: উদ্বেগ কি হৃদস্পন্দন বাড়ায়?
উত্তর: হ্যাঁ, উদ্বেগ হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন করে হৃদস্পন্দন বাড়াতে পারে।
প্রশ্ন: সব সময় হৃদস্পন্দন বেড়ে থাকা কি বিপদজনক?
উত্তর: যদি স্থায়ীভাবে হৃদস্পন্দন বেশি থাকে, তবে এটি হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রশ্ন: ঘরে বসে কিভাবে হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করবো?
উত্তর: মেডিটেশন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
🔚 উপসংহার
হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় কেন—এই প্রশ্নের উত্তর সব সময় সহজ নয়, তবে উপসর্গ বুঝে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কখনো এটি সাময়িক কারণেও হতে পারে, আবার কখনো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। সঠিক জীবনযাপন, নিয়মিত চেকআপ এবং মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষাই এর সেরা সমাধান।