রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রক্ত জমাট বাঁধা বা ব্লাড ক্লট গঠন শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে, যা জীবনঘাতী জটিলতা ডেকে আনতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কী, এর কারণগুলো, লক্ষণ এবং কীভাবে এই ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কেন বেশি হয়?
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করে। প্রধান কারণগুলো হলো:
১. দীর্ঘ সময় ধরে অচল থাকা
যেমন, দীর্ঘ সময় বিমানে বা গাড়িতে বসে থাকা, দীর্ঘ সময় বিছানায় পড়ে থাকা বা শারীরিক কার্যকলাপে অনীহা।
২. শারীরিক আঘাত বা অস্ত্রোপচার
বিশেষ করে পা বা কোমরের বড় অস্ত্রোপচার বা আঘাত হলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান
ধূমপান রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা খারাপ করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. ওজন বেশি থাকা বা স্থূলতা
অতিরিক্ত ওজন রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয় এবং ক্লটের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. বয়স বৃদ্ধির সাথে ঝুঁকি বৃদ্ধি
৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেশি থাকে।
৬. গর্ভাবস্থা ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ
গর্ভাবস্থায় রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের পিলও ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৭. নির্দিষ্ট চিকিৎসা ও রোগ
কিছু রোগ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ বা দীর্ঘমেয়াদী জ্বর এবং নির্দিষ্ট ওষুধও রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির লক্ষণ কী কী?
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে গেলে শরীরে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
-
পায়ে বা হাতে ফুলে যাওয়া
-
গায়ে লালচে বা নীলচে রঙ দেখা
-
ত্বক গরম বা স্পর্শকাতর হওয়া
-
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বা বুকের ব্যথা
-
হঠাৎ মাথাব্যথা বা অসুস্থতা
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমানোর উপায়
১. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সময় মাঝেমধ্যে হাঁটা-চলা করা খুবই জরুরি।
২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ ও পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখলে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো
এসব অভ্যাস পরিহার করলে রক্তনালীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
৫. প্রয়োজনমতো ওষুধ গ্রহণ
যদি ডাক্তারের পরামর্শ থাকে, অ্যান্টিকোয়াগুলান্ট বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করুন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
-
যদি রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ দেখা দেয়
-
শ্বাসকষ্ট বা বুকের ব্যথা শুরু হয়
-
পা বা হাত ফুলে যায় এবং ব্যথা বেশি হয়
অতিশয় গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি নিয়ে আরও পড়ুন:
উপসংহার
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। নিজের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে হবে।