মেনোপজ কি : লক্ষণ, কারণ ও করণীয়

মেনোপজ কি? মেনোপজ (রজোনিবৃত্তি) হল একজন নারীর জীবনের একটি প্রাকৃতিক ধাপ, যা তখন শুরু হয় যখন ১২ মাস পরপর ঋতুস্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এটি মূলত শরীরের হরমোনজনিত পরিবর্তনের ফল, যেখানে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পায়। মেনোপজ একটি ধাপে ধাপে ঘটিত প্রক্রিয়া যা নারীর জীবনে গভীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আনে।

মেনোপজের ধাপগুলি কী কী? মেনোপজ সাধারণত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৭ বছর সময় নেয়, তবে কখনো কখনো ১৪ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি তিনটি ধাপে বিভক্ত:

  1. পেরিমেনোপজ: মেনোপজের আগে যে সময়টি আসে; এই সময়ে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে এবং মাসিকের প্রবাহ কম-বেশি হতে পারে। হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে।

  2. মেনোপজ: যখন এক বছর (১২ মাস) ধরে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে। এই সময়ে হট ফ্ল্যাশ ও অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়।

  3. পোস্টমেনোপজ: মেনোপজের পরবর্তী বছরগুলো। হরমোনের মাত্রা স্থায়ীভাবে নিচে থাকে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন অস্টিওপোরোসিস দেখা দিতে পারে।

মেনোপজ কেন ঘটে এবং এর কারণ কী? মেনোপজ হল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা নারীর প্রজননক্ষমতার অবসান নির্দেশ করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা কমে যায় এবং ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরোনসহ হরমোনের মাত্রা হ্রাস পায়। ফলে মেনোপজ ঘটে।

অকাল মেনোপজ (৪০ বছরের আগে) হতে পারে:

  • কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির কারণে

  • সার্জারি বা পেলভিক ইনজুরির ফলে

  • জেনেটিক বা অটোইমিউন সমস্যার জন্য

মেনোপজের লক্ষণ কী কী – কীভাবে বুঝবেন? মেনোপজের লক্ষণ একজন থেকে অন্যজনে ভিন্ন হতে পারে। শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।

শারীরিক লক্ষণ:

  • হট ফ্ল্যাশ বা হঠাৎ গরম অনুভব

  • রাতের ঘাম হওয়া

  • অনিদ্রা

  • যোনি শুষ্কতা ও যৌনমিলনে অস্বস্তি

  • স্তনে কোমলতা বা ব্যথা

  • ওজন বৃদ্ধি

  • প্রস্রাবের সমস্যা

  • চুল পড়া ও ত্বকের শুষ্কতা

মানসিক লক্ষণ:

  • উদ্বেগ ও রাগপ্রবণতা

  • বিষণ্নতা

  • স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগে দুর্বলতা

  • ক্লান্তি

মেনোপজ কি হয়েছে তা কীভাবে নিশ্চিত করবেন? যদি আপনার মাসিক ১২ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে এবং হট ফ্ল্যাশ বা অনিদ্রার মতো লক্ষণ থাকে, তাহলে মেনোপজ শুরু হয়েছে কিনা তা রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়। PicoAMH Elisa বা FSH পরীক্ষা এ ক্ষেত্রে কার্যকর।

মেনোপজ কি হলে কী করা উচিত – চিকিৎসা ও করণীয় মেনোপজজনিত অস্বস্তি কমাতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে আলোচনা করুন।

চিকিৎসা পদ্ধতি:

  • হরমোন থেরাপি

  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট

  • ভ্যাজিনাল ময়শ্চারাইজার ও লুব্রিক্যান্ট

জীবনযাত্রার পরিবর্তন:

  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন (ওমেগা-৩, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি)

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন (সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট)

  • ধ্যান, যোগব্যায়াম ও শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন করুন

  • ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন

বিকল্প উপশম:

  • ব্ল্যাক কোহোশ, ফ্ল্যাক্সসিড ইত্যাদি কিছু উপাদান উপকারী হতে পারে, তবে ব্যবহারের আগে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও জানুন:

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

মেনোপজের তিনটি ধাপ কী কী? পরিমেনোপজ, মেনোপজ, ও পোস্টমেনোপজ। প্রতিটি ধাপে আলাদা পরিবর্তন ও লক্ষণ দেখা যায়।

মেনোপজের প্রথম লক্ষণ কী? অনিয়মিত মাসিক, হট ফ্ল্যাশ, রাত্রিকালীন ঘাম, মেজাজ পরিবর্তন ইত্যাদি।

মেনোপজ কি হলে গর্ভধারণ সম্ভব? না, মেনোপজের পর ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়।

সর্বশেষ কথা মেনোপজ কি – এটি শুধু ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া নয়; এটি নারীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ধাপ। শারীরিক ও মানসিক নানা লক্ষণের জন্য সচেতনতা ও সহায়তা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও পেশাদার চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া শ্রেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top