মেনোপজের লক্ষণগুলির জন্য সর্বশেষ চিকিৎসা?

মেনোপজের লক্ষণের চিকিৎসা – বাংলায় অনুবাদ

মেনোপজ কী?
মেনোপজ এমন একটি সময় যখন নারীর মাসিক ঋতুচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত, টানা ১২ মাস ঋতুস্রাব না হলে মেনোপজ হয়েছে বলে ধরা হয়।

মেনোপজ শুরু হওয়ার আগের কয়েক বছরে শরীরে হরমোনের (বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) পরিমাণ কমতে থাকে। এই সময়টাতে মাসিক অনিয়ম, গরম অনুভব (হট ফ্ল্যাশ), এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

এই পরিবর্তনের সময়টিকে পেরিমেনোপজ বলা হয়, যা শেষ মাসিকের আগে শুরু হয়ে ১২ মাস পর পর্যন্ত চলতে পারে। অনেকে একে সাধারণভাবে “মেনোপজ” বলে থাকেন।

যদিও প্রত্যেকের মেনোপজের লক্ষণের চিকিৎসা অভিজ্ঞতা আলাদা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে, জাতিগত পার্থক্য মেনোপজের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে।


মেনোপজ শুরু হওয়ার সময়

মেনোপজ সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে শুরু হয়। তবে জাতিগত বৈচিত্র্যের কারণে এই বয়সে তারতম্য হতে পারে।

  • একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ (Black) নারীদের মেনোপজ শুরু হয় গড়ে ৮.৫ মাস আগে।

  • হিস্পানিক (Hispanic), নেটিভ হাওয়াইয়ান (Native Hawaiian) নারীদের ক্ষেত্রেও আগে শুরু হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে।

  • জাপানি-আমেরিকান নারীদের মেনোপজ তুলনামূলক দেরিতে শুরু হতে পারে।

এর পেছনে স্বাস্থ্য ও সামাজিক বৈষম্য একটি বড় কারণ। যেমন:

  • আর্থিক চাপ

  • অ্যালকোহল ও তামাক ব্যবহার

  • স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো

তবে যখন এসব বিষয় (স্বাস্থ্য, ওজন, ধূমপান, শিক্ষা, চাকরি, ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য অনেকটাই কমে যায়।


মেনোপজ কতদিন স্থায়ী হয়?

মেনোপজের পরিবর্তনকাল ২ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তবে গড়ে এটি ৪ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত হয়।

মেনোপজ শুরু হওয়ার বয়স এর স্থায়ীত্বকে প্রভাবিত করে।

  • দেরিতে শুরু হলে পরিবর্তনকাল তুলনামূলক ছোট হয়।

  • কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সময়কাল সাধারণত বেশি দীর্ঘ হয়।


মেনোপজের লক্ষণ

মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • অনিয়মিত ঋতুচক্র

  • গরম অনুভব বা রাতের ঘাম

  • ঘুমের সমস্যা

  • মেজাজ পরিবর্তন বা রাগ

  • যৌন আগ্রহের হ্রাস, যোনি শুষ্কতা

গবেষণায় দেখা গেছে:

  • কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা হট ফ্ল্যাশ বা গরম অনুভবে বেশি ভোগেন।

  • এই উপসর্গগুলো তাদের জন্য বেশি কষ্টকর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

  • ঘুমের সমস্যা, বিশেষ করে ঘন ঘন জেগে ওঠার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়।

অন্যদিকে:

  • শ্বেতাঙ্গ নারীরা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (জিআই) সমস্যায় বেশি ভোগেন।

  • এশিয়ান আমেরিকান নারীরা এই সমস্যায় সবচেয়ে কম ভোগেন।


স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য

যদিও কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক নারীরা বেশি উপসর্গে ভোগেন, তবুও তাদের সমস্যাগুলো অনেক সময় নথিভুক্তই হয় না, ফলে চিকিৎসা পান না।

  • ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গ নারীদের তুলনায়:

    • কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ২৬% কম হরমোন থেরাপি পান

    • হিস্পানিক নারীরা ৩২% কম হরমোন থেরাপি পান

    • কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের যোনি ইস্ট্রোজেন ব্যবস্থাও কম দেওয়া হয়

এর কারণ হতে পারে:

  • স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে রোগীর আলোচনা পদ্ধতিতে পার্থক্য

  • নিজের চিকিৎসা পছন্দ; যেমন, কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা হরমোন থেরাপি নিতে তুলনামূলক অনাগ্রহী


মেনোপজ-পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি

মেনোপজের পর নারীরা হরমোন পরিবর্তনের কারণে কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়েন, যেমন:

  • হৃদরোগ

  • হাড় ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস)

  • ডায়াবেটিস

  • ক্যান্সার

আগে মেনোপজ শুরু হলে এসব রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।

মেটাবলিক সিনড্রোম – উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি, ও চর্বি বেড়ে যাওয়া – কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।


শেষ কথা

মেনোপজের লক্ষণের চিকিৎসা প্রত্যেক নারীর জন্য ভিন্নরকম। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বর্ণ ও জাতিগত পার্থক্য মেনোপজের উপসর্গ ও চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখে।

এই সময়টাতে নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। যেকোনো উদ্বেগ বা সমস্যা থাকলে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে আলোচনা করে উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top