ডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ যা তখন হয় যখন রক্তে গ্লুকোজ বা রক্তে চিনি খুব বেশি থাকে। গ্লুকোজ আমাদের শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। শরীর নিজেও গ্লুকোজ তৈরি করতে পারে, তবে এটি খাদ্য থেকেও আসে।
ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয় (pancreas) তৈরি করে এবং এটি গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে যাতে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ডায়াবেটিস থাকলে শরীর হয়তো পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, অথবা ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে গ্লুকোজ রক্তে থেকে যায় এবং কোষে পৌঁছাতে পারে না।
ডায়াবেটিস চোখ, কিডনি, স্নায়ু এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। এটি কিছু ধরনের ক্যানসারের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।
ডায়াবেটিসের ধরনসমূহ
১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস
এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর সামান্য বা একেবারেই ইনসুলিন তৈরি করে না। রোগীর রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন তৈরিকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করে ফেলে। এটি সাধারণত শিশু বা তরুণদের মধ্যে দেখা যায়, তবে যেকোনো বয়সেই হতে পারে। টাইপ ১ বহুমূত্ররোগ রোগীদের প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয় বেঁচে থাকার জন্য।
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস
এই ধরনের বহুমূত্ররোেগে শরীরের কোষগুলি ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না (ইনসুলিন রেজিস্টেন্স)। অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করলেও তা পর্যাপ্ত হয় না। এটি সবচেয়ে সাধারণ ডায়াবেটিস। অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা এবং পারিবারিক ইতিহাস থাকলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যে কোনো বয়সেই এটি হতে পারে, এমনকি শিশুরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। সঠিক জীবনধারা যেমন ওজন কমানো বা ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে টাইপ ২ বহুমূত্ররোগ প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা সম্ভব।
৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় দেখা দেওয়া ডায়াবেটিসকে বলে গর্ভকালীন বহুমূত্ররোগ। বেশিরভাগ সময় শিশুর জন্মের পর এটি চলে যায়। তবে যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়, তাদের ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কখনো কখনো গর্ভাবস্থায় শনাক্ত হওয়া বহুমূত্ররোগ আসলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
৪. প্রিডায়াবেটিস
যাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিন্তু টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার মতো বেশি নয়, তাদের প্রিডায়াবেটিস বলা হয়। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. অন্যান্য বহুমূত্ররোগ
মনোজেনিক বহুমূত্ররোগ (একটি জিন পরিবর্তনের কারণে হয়) একটি বিরল প্রকার। এছাড়া অগ্ন্যাশয় অপসারণ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, বা প্যানক্রিয়াটাইটিসের মতো রোগের কারণে অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতির ফলে বহুমূত্ররোগ হতে পারে।
ডায়াবেটিস এবং প্রিডায়াবেটিস কতটা সাধারণ?
যুক্তরাষ্ট্রে ১৩৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ বহুমূত্ররোগ বা প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ৩৭.৩ মিলিয়ন আমেরিকান, যা মোট জনসংখ্যার ১১.৩%, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪ জনে ১ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
প্রায় ১/৪ প্রাপ্তবয়স্ক রোগী জানেই না যে তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
বহুমূত্ররোগ আক্রান্তদের ৯০%-৯৫% টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
২০১৯ সালে, ৯৬ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক (মোট প্রাপ্তবয়স্কদের ৩৮%) প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা কী হতে পারে?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে হৃদপিণ্ড, কিডনি, পা ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রক্তে গ্লুকোজ, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এসব ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
চোখের ভিতর পরীক্ষা করছেন এমন এক চিকিৎসকের ছবি দেওয়া হয়েছে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে চোখসহ ভবিষ্যতের অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডায়াবেটিস এর লক্ষন জানেত ক্লিক করুন ।