টাইফয়েড জ্বর একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যা সাধারণত দূষিত খাবার বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগে রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হজম ক্ষমতা কমে যায়। তাই প্রশ্নটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ: টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত?
সঠিক খাবার গ্রহণ করলে শরীর দ্রুত শক্তি ফিরে পায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো টাইফয়েড জ্বরে খাওয়া উচিত এমন স্বাস্থ্যকর ও সহজপাচ্য খাবারগুলো সম্পর্কে।
১. পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করুন
টাইফয়েড জ্বরে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়, ফলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি থাকে। তাই প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার তরল খাবার খাওয়া জরুরি।
যেসব তরল খাবার উপকারী:
সাদা ভাতের মাড়
ডাবের পানি
ওআরএস
লবণ-চিনি মেশানো পানি
চিকেন বা ভেজিটেবল ক্লিয়ার স্যুপ
গরম পানিতে চা (ক্যাফেইন ছাড়া)
✅ এগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২. সহজপাচ্য শর্করা জাতীয় খাবার
টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত এর উত্তরে সবার আগে আসে সহজপাচ্য শর্করা, কারণ এগুলো হজমে সহজ এবং দ্রুত শক্তি দেয়।
খাওয়া যেতে পারে:
সাদা ভাত
সেদ্ধ সুজি বা সেমাই
পাতলা খিচুড়ি
আটার রুটি (সাদা আটা ভালো)
এই খাবারগুলোতে কম ফাইবার থাকায় হজমে সুবিধা হয়।
৩. সেদ্ধ ও হালকা সবজি
সবজি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক, কিন্তু টাইফয়েডে কাঁচা সবজি খাওয়া ঠিক না। ভালো করে সেদ্ধ করে খেলে তা নিরাপদ ও উপকারী।
উপযুক্ত সবজি:
গাজর
লাউ
পেঁপে
কুমড়া
এই সবজি গুলো ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর, যা শরীরকে সুস্থ করে তোলে।
৪. হালকা প্রোটিন জাতীয় খাবার
টাইফয়েডে প্রোটিনের প্রয়োজন হয় কিন্তু তা হতে হবে হালকা এবং হজমযোগ্য। অতিরিক্ত প্রোটিন ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
উপযোগী প্রোটিন:
সেদ্ধ ডিম (অর্ধেক নয়, পুরো সিদ্ধ)
ফ্যাটমুক্ত দুধ বা দই (ডাক্তারের অনুমতি থাকলে)
ফ্যাট ছাড়া চিকেন স্যুপ
প্রোটিন কোষ মেরামতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে।
৫. ফলমূল যা খাওয়া যেতে পারে
টাইফয়েড জ্বরে কিছু নির্দিষ্ট ফল খাওয়া যায়, তবে অবশ্যই তা ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে বা হালকা সেদ্ধ করে নিতে হবে।
উপকারী ফল:
পাকা কলা
সেদ্ধ আপেল
খেজুর
পাকা পেঁপে (সেদ্ধ করে)
🍌 পাকা কলা হজমে সহায়ক ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।
৬. খাবার যা এড়িয়ে চলা উচিত
দুধ দিয়ে বানানো মিষ্টি
তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার
বাইরের স্ট্রিট ফুড
কাঁচা ফল ও সবজি
কোমল পানীয় বা ঠান্ডা পানীয়
❌ এসব খাবার হজমে অসুবিধা করে ও সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
টাইফয়েড রোগীর খাদ্য পরিকল্পনায় অতিরিক্ত কিছু টিপস
অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ান
সব খাবার গরম ও স্বাস্থ্যকরভাবে রান্না করুন
হাত ধুয়ে খাবার দিন
কোনো খাবার ফ্রিজ থেকে সরাসরি খাওয়াবেন না
চিনি ও লবণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
যদি:
৩ দিনের বেশি জ্বর থাকে
রক্তে ডায়রিয়া বা বমি দেখা দেয়
রোগী খুব দুর্বল হয়ে পড়ে
জ্বরের সঙ্গে মানসিক বিভ্রান্তি দেখা দেয়
👉 তখন অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত — এই প্রশ্নের উত্তর জানলে আপনি বা আপনার প্রিয়জন দ্রুত সুস্থ হতে পারেন। খাবার শুধু শরীরের পুষ্টি নয়, ওষুধের মতো কাজ করে। তাই টাইফয়েডে সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
✅ মনে রাখবেন, খাবার যত স্বাস্থ্যকর হবে, সুস্থতা তত দ্রুত আসবে।