আলসারেটিভ কোলাইটিস হলো এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ, যা কোলন ও রেকটামের অভ্যন্তরীণ স্তরকে আক্রান্ত করে। এটি “ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ” (IBD)-এর অন্তর্ভুক্ত একটি প্রধান শাখা।
আলসারেটিভ কোলাইটিসের কারণ
এই রোগের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, এটি ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার ফল। কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাসও বড় ভূমিকা রাখে।
আলসারেটিভ কোলাইটিসের প্রধান লক্ষণসমূহ
পেটে ব্যথা এবং ক্র্যাম্প
রক্তযুক্ত ডায়রিয়া
ওজন হ্রাস
তীব্র ক্লান্তিভাব
জ্বর
ক্ষুধামান্দ্য
এই লক্ষণগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে বা বেড়ে যেতে পারে। কখনো কখনো আলসারেটিভ কোলাইটিস পুরোপুরি শান্ত (রেমিশন) অবস্থায়ও থাকে।
আলসারেটিভ কোলাইটিসের ধরণ
ইউলসারেটিভ প্রোক্টাইটিস: শুধুমাত্র রেকটাম আক্রান্ত হয়
লেফট-সাইডেড কোলাইটিস: কোলনের বাম পাশ আক্রান্ত হয়
প্যানকোলাইটিস: পুরো কোলন জুড়ে প্রদাহ দেখা দেয়
চিকিৎসা পদ্ধতি
আলসারেটিভ কোলাইটিস চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনা। চিকিৎসা সাধারণত নিচের তিনটি ভাগে বিভক্ত:
১. ওষুধ
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস: যেমন মেসালামিন (Mesalamine), সুলফাসালাজিন (Sulfasalazine)
ইমিউনোসাপ্রেসেন্টস: যেমন অ্যাজাথিওপ্রিন (Azathioprine), সাইক্লোস্পোরিন
বায়োলজিক থেরাপি: যেমন ইনফ্লিক্সিম্যাব (Infliximab), vedolizumab
২. ডায়েট ও জীবনযাত্রা
ফাইবার কম খাবার
ক্যাফেইন, দুগ্ধজাত পণ্য, মসলাযুক্ত খাবার এড়ানো
পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
৩. সার্জারি
যদি ওষুধে কাজ না হয় বা জটিলতা তৈরি হয়, তবে কোলন অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এটি নির্ভর করে রোগের মাত্রা ও অবস্থার উপর।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আলসারেটিভ কোলাইটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:
মাথা ঘোরা বা বমি ভাব
লিভার এনজাইমের বৃদ্ধি
রক্তে সাদা কণিকার পরিমাণ হ্রাস
সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি
বিস্তারিত জানতে পারেন Mayo Clinic এর আলসারেটিভ কোলাইটিস পৃষ্ঠা থেকে। (Outbound link)
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি লক্ষণ তীব্র হয় বা হঠাৎ বেড়ে যায়
ওষুধে কোনো উপকার না হয়
নতুন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়
আলসারেটিভ কোলাইটিস ও মানসিক স্বাস্থ্য
অনেক রোগীর ক্ষেত্রে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, কিংবা বিষণ্নতা রোগের তীব্রতা বাড়াতে পারে। তাই রোগীর মানসিক সুস্থতার দিকে খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
আলসারেটিভ কোলাইটিস একটি জটিল কিন্তু নিয়ন্ত্রনযোগ্য রোগ। সঠিক চিকিৎসা, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে অধিকাংশ রোগী একটি স্বাভাবিক ও কার্যকর জীবনযাপন করতে সক্ষম হন।
📌 আরও পড়ুন: আলসারেটিভ কোলাইটিস: খাদ্য তালিকা ও এড়ানোর জিনিস