আঘাতে রক্ত জমাট বাঁধলে করণীয় বিষয়টি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রক্ত জমাট বাঁধা (Blood Clot) কখনও কখনও মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আঘাতের পর রক্ত জমাট বাঁধার ফলে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসা না নিলে জটিলতা বাড়াতে পারে। এই লেখায় আমরা বিস্তারিত জানব, আঘাতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণ, লক্ষণ, করণীয় এবং কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
আঘাতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণ কী?
আঘাতের পরে রক্ত জমাট বাঁধা সাধারণত রক্তনালীর অভ্যন্তরে রক্ত কণিকা জমে গিয়ে ঘটে। আঘাতের সময় রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া চালু করে। তবে কখনো কখনো অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধা শরীরে ক্ষতি করতে পারে।
বেশ কিছু কারণ আঘাতের পরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যেমন:
-
গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা (Deep Vein Thrombosis বা DVT)
-
দীর্ঘ সময় বিছানায় পড়ে থাকা বা অকার্যকর হওয়া
-
বয়স এবং স্থূলতা
-
ধূমপান
-
কিছু ওষুধের প্রভাব
আরও পড়ুন: Mayo Clinic: Blood Clots
আঘাতে রক্ত জমাট বাঁধলে লক্ষণগুলো কী?
আঘাতে রক্ত জমাট বাঁধলে করণীয় বুঝতে হলে প্রথমে লক্ষণগুলো চিনতে হবে:
-
আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বা আশেপাশে টান বা ব্যথা
-
ফোলা ও লালচে ভাব
-
ত্বক গরম লাগা
-
শ্বাসকষ্ট বা বুকের ব্যথা (যদি রক্ত জমাট ফুসফুসে চলে যায়)
-
হাত বা পায়ের রঙ পরিবর্তন
এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
আঘাতে রক্ত জমাট বাঁধলে করণীয় কী?
১. দ্রুত চিকিৎসা নিন
যদি আঘাতের পর রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ দেখা দেয়, অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা যেমন আল্ট্রাসাউন্ড বা ডোপলার স্ক্যান করে রক্ত জমাট বাঁধার মাত্রা নির্ধারণ করবেন।
২. ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা
ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিকোয়াগুলান্ট (Blood Thinners) ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা রক্ত জমাট কমাতে সাহায্য করে। এগুলো রক্ত পাতলা করে জমাট বাঁধা রোধ করে।
৩. আঘাতস্থল বিশ্রাম ও যত্ন
আঘাতপ্রাপ্ত অংশ বিশ্রাম দিন, এবং জখম স্থানে অতিরিক্ত চাপ বা আঘাত এড়িয়ে চলুন।
৪. নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম
বিশ্রামের পাশাপাশি ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করা উচিত, যাতে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে।
৫. কমপ্রেশন স্টকিংস ব্যবহার
বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কমপ্রেশন স্টকিংস পরা যেতে পারে, যা রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে এবং জমাট বাঁধা কমায়।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
-
যদি আঘাতের পর রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ দেখা দেয়
-
শ্বাসকষ্ট, বুকের ব্যথা বা বমি বমি ভাব শুরু হয়
-
পা বা হাত ফুলে যায় এবং ব্যথা বাড়ে
-
ত্বকের রঙ পরিবর্তিত হয় বা ঠান্ডা অনুভব হয়
এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত জরুরি চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
আঘাতে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধের উপায়
-
আঘাতের পরে দ্রুত ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করুন
-
দীর্ঘ সময় একই অবস্থায় বসে থাকবেন না
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
-
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
উপসংহার
আঘাতে রক্ত জমাট বাঁধলে করণীয় জানা থাকলে আপনি দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন। রক্ত জমাট বাঁধা প্রাথমিক অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তাই আঘাতের পর শরীরের কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।